Sunday, 10 July 2016

হিন্দুধর্ম

১৯শে সেপ্টেম্বর, নবম দিবসের অধিবেশনে স্বামীজী এই প্রবন্ধটি পাঠ করেন।
হিন্দু, জরথুষ্ট্রীয় ও ইহুদী -এই তিনটি ধর্মই প্রাগৈতিহাসিক যুগ হইতে বর্তমান কাল অবধি এই পৃথিবীতে প্রচলিত রহিয়াছে। এই ধর্মগুলির প্রত্যেকটিই প্রচন্ড আঘাত সহ্য করিয়াছে, তথাপি লুপ্ত না হইয়া এগুলি যে এখও জীবিত আছে, তাহাতেই প্রমাণিত হইতেছে যে, ইহাদের মধ্যে মহতী শক্তি নিহিত আছে। কিন্তু একদিকে যেমন ইহুদী-ধর্ম তৎপ্রসূত খ্রীষ্টধর্মকে আত্মসাৎ করিতে পারা তো দূরের কথা, নিজেই ঐ সর্বজয়ী ধর্ম দ্বারা স্বীয় জন্মভূমি হইতে বিতাড়িত হইয়াছ, এবং অতি অল্পসংখ্যক পারসী মাত্র এখন মহান জরথুষ্টীয় ধর্মের সাক্ষিস্বরূপ হইয়া রহিয়াছে; অপরদিকে আবার ভারতবর্ষে সম্প্রদায়ের পর সম্প্রদায় উত্থিত হইয়াছে, মনে হইয়াছে যেন বেদোক্ত ধর্মের ভিত্তি পর্যন্ত নড়িয়া গেল; কিন্তু প্রচণ্ড ভূমিকম্পের সময় সাগরসলিল যেমন কিছু পশ্চাৎপদ হইয়া সহস্রগুণ প্রবল বেগে সর্বগ্রাসী বন্যারূপে ফিরিয়া আসে, সেইরূপ ইহাদের জননীস্বরূপ বেদোক্ত ধর্মও প্রথমতঃ কিঞ্চিৎ পশ্চাৎপদ হইয়া আলোড়নের অগ্রগতি শেষ হইলে ঐ সম্প্রদায়গুলিকে সর্বতোভাবে আত্মসাৎ করিয়া নিজের বিরাট দেহ পুষ্ট করিয়াছে।
বিজ্ঞানের অতি আধুনিক আবিষ্ক্রিয়াসমূহ বেদান্তের যে মহোচ্চ আধ্যাত্মিক ভাবের প্রতিধ্বনি মাত্র, সেই সর্বোৎকৃষ্ট বেদান্তজ্ঞান হইতে নিম্নস্তরের মূর্তিপূজা ও আনুষঙ্গিক নানাবিধ পৌরাণিক গল্প পর্যন্ত সবকিছুরই, এমন কি বৌদ্ধদের অজ্ঞেয়বাদ, জৈনদের নিরীশ্বরবাদ-এগুলিরও স্থান হিন্দুধর্মে আছে। এখন প্রশ্ন হইতে পারে, এই সকল বহুধা বিভিন্ন ভাব কোন্ সাধারণ কেন্দ্রে সংহত হইয়াছে? কোন্ সাধারণ ভিত্তি আশ্রয় করিয়া এই আপাতবিরোধী ভাবগুলি অবস্থান করিতেছে? আমি এখন এই প্রশ্নেরই মীমাংসা করিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিব।
আপ্তবাক্য বেদ হইতে হিন্দুগণ তাঁহাদের ধর্ম লাভ করিয়াছেন। তাঁহারা বেদসমূহকে অনাদি ও অনন্ত বলিয়া বিশ্বাস করেন। একখানি পুস্তককে অনাদি ও অনন্ত বলিলে এই শ্রোতৃনণ্ডলীর কাছে তাহা হাস্যকর বলিয়া মনে হইতে পারে বটে, কিন্তু ‘বেদ’ শব্দদ্বারা কোন পুস্তক-বিশেষ বুঝায় না। ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তি বিভিন্ন সময়ে যে আধ্যাত্মিক সত্যসমূহ আবিষ্কার করিয়া গিয়াছেন, বেদ সেই-সকলের সঞ্চিত ভান্ডারস্বরূপ। আবিষ্কৃত হইবার পূর্বেও মাধ্যাকর্ষণের নিয়মাবলী যেমন সর্বত্রই বিদ্যমান ছিল এবং সমুদয় মনুষ্য-সমাজ ভুলিয়া গেলেও যেমন ঐগুলি বিদ্যমান থাকিবে, আধ্যাত্মিক জগতের নিয়মাবলীও সেইরূপ। আত্মার সহিত আত্মার যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সম্বন্ধ, প্রত্যেক জীবাত্মার সহিত সকলের পিতাস্বরূপ পরমাত্মার যে দিবা সম্বন্ধ, আবিষ্কৃত হইবার পূর্বেও সেগুলি ছিল এবং সকলে বিস্মৃত হইয়া গেলেও এগুলি থাকিবে।
এই আধ্যাত্মিক সত্যগুলির আবিষ্কারকগণের নাম ‘ঋষি’। আমরা তাঁহাদিগকে সিদ্ধ বা পূর্ণ বলিয়া ভক্তি ও মান্য করি। আমি এই শ্রোতৃমন্ডলীকে অতি আনন্দের সহিত বলিতেছি যে, অতিশয় উন্নত ঋষিদের মধ্যে কয়েকজন নারীও ছিলেন।
এ-স্থলে এরূপ বলা যাইতে পারে যে, উক্তআধ্যাত্মিক নিয়মাবলী নিয়মরূপে অনন্ত হইতে পারে, কিন্তু অবশ্যই তাহাদের আদি আছে। বেদ বলেন -সৃষ্টি অনাদি ও অনন্ত। বিজ্ঞানও প্রমাণ করিয়াছে যে, বিশ্বশক্তির সমষ্টি সর্বদা সমপরিমান। আচ্ছা, যদি এমন এক সময়ের কল্পনা করা যায়, যখন কিছুই ছিল না, তবে এই সকল ব্যক্ত শক্তি তখন ছিল কোথায়? কেহ বলিবেন যে এগুলি অব্যক্ত অবস্হায় ঈশ্বরেই ছিল। তাহা হইলে বলিতে হয়-ঈশ্বর কখনও সুপ্ত বা নিষ্ক্রিয়, কখনও সক্রিয় বা গতিশীল; অর্থাৎ তিনি বিকারশীল! বিকারশীল পদার্থমাত্রই মিশ্র পদার্থ এবং মিশ্র-পদার্থমাত্রই ধ্বংস-নামক পরিবর্তনের অধীন। তাহা হইলে ঈশ্বরেরও মৃত্যু হইবে; কিন্তু তাহা অসম্ভব। সুতরাং এমন সময় কখনও ছিল না, যখন সৃষ্টি ছিল না; কাজেই সৃষ্টি অনাদি।
কোন উপমা দ্বারা বুঝাইতে হইলে বলিতে হয় -সৃষ্টি ও স্রষ্টা দুইটি অনাদি ও অনন্ত সমান্তরাল রেখা। ঈশ্বর শক্তিস্বরূপ-নিত্যসক্রিয় বিধাতা; তাঁহারই নির্দেশে বিশৃঙ্খল প্রলয়াবস্থা হইতে একটির পর একটির পর একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ জগৎ সৃষ্ট হইতেছে, কিচুকাল চালিত হইতেছে, পুনরায় ধ্বংস হইয়া যাইতেছে। হিন্দুবালক গুরুর সহিত প্রতিদিন আবৃত্তি করিয়া থাকেঃ ‘সূর্যাচন্দ্রমসৌ ধাতা যথাপূর্বমকল্পয়ৎ।’-অর্থাৎ বিধাতা পূর্ব-পূর্ব কল্পের সূর্য ও চন্দ্রের মতো এই সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করিয়াছেন। ইহা আধুনিক বিজ্ঞানসন্মত।
আমি এখানে দাঁড়াইয়া আছি। যদি চক্ষু মুদ্রিত করিয়া আমার সত্তা সম্বন্ধে চিন্তা করিবার চেষ্টা করি-‘আমি’ ‘আমি’ ‘আমি’,তাহা হইলে আমার মনে কি ভাবের উদয় হয়? এই দেহই আমি-এই ভাবই মনে আসে। তবে কি আমি জড়ের সমষ্টি ছাড়া আর কিছু নই? বেদ বলিতেছেন : না, আমি এই দেহ নই। দেহ মরিবে,কিন্তু আমি মরিব না। আমি এই দেহের মধ্যে আছি, কিন্তু যখন এই দেহ মরিয়া যাইবে তখনও আমি বাঁচিয়া থাকিব এবং এই দেহের জন্মের পূর্বেও আমি ছিলাম। আত্মা শূন্য হইতে সৃষ্ট নয়, কারণ ’সৃষ্টি’ শব্দের অর্থ বিভিন্ন দ্রব্যের সংযোগ; ভবিষ্যতে এগুলি নিশ্চয়ই আবার বিচ্ছিন্ন হইবে। অতএব আত্মা যদি সৃষ্ট পদার্থ হন, তাহা হইলে তিনি মরণশীলও বটে। সুতরাং আত্মা সৃষ্ট পদার্থ নন।
কেহ জন্মিয়া অবধি সুখভোগ করিতেছে- শরীর সুস্থ ও সুন্দর, মন উৎসা্হপূর্ণ, কিছুরই অভাব নাই; আবার কেহ জন্মিয়া অবধি দুঃখভোগ করিতেছে-কাহারও হস্ত-পদ নাই, কেহ বা জড়বুদ্ধি এবং অতি কষ্টে জীবন যাপন করিতেছে।
যখন সকলেই এক ন্যায়পরায়নণ ও করুণামায় ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্ট, তখন কেহ সুখী এবং কেহ দুঃখী হইল কেন? ভগবান কেন এত পক্ষপাতী? যদি বলো যে, যাহারা এজন্মে দুঃখভোগ করিতেছে, পরজন্মে তাহারা সুখী হইবে, তাহাতে অবস্থার কিছু উন্নতি হইল না। দয়াময় ও ন্যায়পরায়ণ ঈশ্বরের রাজ্যে একজনও কেন দুঃখভোগ করিবে? দ্বিতীয়তঃ সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে এভাবে দেখিলে এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিতর সৃষ্টির অন্তর্গত অসঙ্গতির কোন কারণ প্রদর্শন করার চেষ্টাও লক্ষিত হয় না; পরন্তু এক সর্বশক্তিমান্ স্বেচ্ছাচারী পুরুষের নিষ্ঠুর আদেশেই স্বীকার করিয়া লওয়া হইল। স্পষ্টতই ইহা অবৈজ্ঞানিক। অতএব স্বীকার করিতে হইবে সুখী বা দুঃখী হইয়া জন্মিবার পূর্বে নিশ্চয় বহুবিধ কারণ ছিল, যাহার ফলে জন্মের পর মানুষ সুখী বা দুঃখী হয়; তাহার নিজের পূর্বজন্মের কর্মসমূ্হই সেই-সব কারণ।
দেহ-মনের প্রবণতা মাতাপিতার দেহ-মনের প্রবণতা হইতেই উত্তরাধিকারসূত্রে লব্ধ হয় না কি? দেখা যাইতেছে যে, দুইটি সত্ত্বা সমান্তরাল রেখায় বর্তমান-একটি মন, অপরটি স্থূল পদার্থ। যদি জড় ও জড়ের বিকার দ্বারাই আমাদের অন্তর্নিহিত সকল ভাব যথেষ্টভাবে ব্যাখ্যাত হয়, তবে আর আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করিবার কোন আবশ্যকতা থাকিতে পারে না। কিন্ত জড় হইতে চিন্তা উদ্ভূত হইয়াছে-ইহা প্রমাণ করা যায় না, এবং যদি দার্শনিক দৃষ্টিকোণ হইতে একত্ববাদ অপরিহার্য হয়, তবে আধ্যাত্মিক একাত্ববাদ নিশ্চয়ই যুক্তিসঙ্গত এবং জড়বাদী একাত্ববাদ অপেক্ষা ইহা কম বাঞ্ছনীয় নয়; কিন্তু বর্তমান প্রসঙ্গে এ দুইটির কোনটিরই প্রয়োজন নাই।
আমরা অস্বীকার করিতে পারি না, শরীরমাত্রেই উত্তরাধিকারসূত্রে কতকগুলি প্রবণতা লাভ করে, কিন্তু সেগুলি সম্পূর্ণ দৈহিক। এই দৈহিক প্রবণতার মাধ্যমেই মনের বিশেষ প্রবণতা ব্যক্ত হয়। মনের এরূপ বিশেষ প্রবণতার কারণ পূর্বানুষ্ঠিত কর্ম। বিশেষ কনো প্রবণতাসম্পন্ন জীব সদৃশবস্তুর প্রতি আকর্ষণের নিয়মানুসারে এমন এক শরীরে জন্মগ্রহণ করিবে, যাহা তাহার ঐ প্রবণতা বিকশিত করিবার সর্বশ্রেষ্ঠ সহায় হয়। ইহা সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞান-সম্মত, কারণ বিজ্ঞান অভ্যাস দ্বারা সব কিছু ব্যাখ্যা করিতে চায়, অভ্যাস আবার পুনঃপুনঃ অনুষ্ঠানের ফল। সুতরাং অনুমান করিতে হইবে, নবজাত প্রাণীর স্বভাবও তাহার পুনঃপুনঃ অনুষ্ঠিত কর্মের ফল; এবং যেহেতু তাহার পক্ষে বর্তমান জীবনে ঐগুলি লাভ করা অসম্ভব, অতএব অবশ্যই পূর্ব জীবন হইতেই ঐতুলি আসিয়াছে।
আর একটি প্রশ্নের ইৃঙ্গিত আছে। স্বীকার করা গেল পূর্বজন্ম আছে, কিন্তু পূর্ব জীবনের বিষয় আমাদের মনে থাকে না কেন? ইহা সহজেই বুঝানো যাইতে পারে। আমি এখন ইংরাজীতে কখা বলিতেছি, ইহা আমার মাতৃভাষা নয়। বাস্তবিক এখন আমার চেতন-মনে মাতৃভাষার একটি অক্ষরও নাই। কিন্তু যদি আমি মনে করিতে চেষ্টা করি, তাহা হইলে উহা এখনই প্রবল বেগে মনে উঠিবে। এই ব্যাপারে বুঝা যাইতেছে, মনঃসমুদ্রের উপরিভাগেই চেতন-ভাব অনুভূত হয় এবং আমাদের পূর্বার্জিত অভিজ্ঞতা সেই সমুদ্রের গভীরদেশে সঞ্চিত থাকে।
চেষ্টা ও সাধনা কর, ঐগুলি সব উপরে উঠিয়া আসিবে, এমন কি পূর্বজন্ম সম্বন্ধেও তুমি জানিতে পারিবে।
পূর্বজন্ম সম্বন্ধে ইহাই সাক্ষাৎ ও পরীক্ষামূলক প্রমাণ। কার্যক্ষেএে সত্যতা নির্ণীত হইলেই কোন মতবাদ সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত হয়, এবং ঋষিগণ সমগ্র জগতে সদর্পে ঘোষণা করিতেছেন : স্মৃতিসাগরের গভীরতম প্রদেশ কিরূপে অলোড়িত করিতে হয়, সেই রহস্য আমরা আবিষ্কার করিয়াছি। সাধনা কর, তোমরাও পূর্বজন্মের সকল কথা মনে করিতে পারিবে।
অতএব দেখা গেল, হিন্দু নিজেকে আত্মা বলিয়া বিশ্বাস করে। ‘সেই আত্মাকে তরবারি ছেদন করিতে পারে না, অগ্নি দগ্ধ করিতে পারে না, জল আর্দ্র করিতে পারে না এবং বায়ু শুষ্ক করিতে পারে না।’ হিন্দু বিশ্বাস করে : সেই আত্মা এমন একটি বৃত্ত, যাহার পরিধি কোথাও নাই, কিন্তু যাহার কেন্দ্র দেহমধ্যে অবস্থিত, এবং সেই কেন্দ্রের দেহ হইতে দেহান্তরে গমনের নামই মৃত্যু। আর আত্মা জড়নিয়মের বশীভূত নন, আত্মা নিত্য-শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত-স্বভাব। কিন্তু কোন কারণবশতঃ জড়ে আবদ্ধ হইয়াছেন ও নিজেকে জড় মনে করিতেছেন।
পরবর্তী প্রশ্ন : কেন এই শুদ্ধ পূর্ণ ও মুক্ত আত্মা জড়ের দাসত্ব-নিগড়ে আবদ্ধ? পূর্ণ হইয়াও কেন তিনি নিজেকে অপূর্ণের ন্যায় মনে করিতেছেন? শুনিয়াছি, কেহ কেহ মনে করেন-এই প্রশ্নের যথাযথ মীমাংসা করিতে পারিবেন না বলিয়া হিন্দুগণ উহা এড়াইয়া চলিতে চেষ্টা করেন। কোন কোন পন্ডিত আত্মা ও জীব-এই দুয়ের মধ্যে কতকগুলি পূর্ণকল্প সত্তার অস্তিত্ব কল্পনা করিয়া এ প্রশ্নের মীমাংসা করিতে চান এবং শূন্যস্থান পূর্ণ করিতে বহুবিধ সুদীর্ঘ বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা ব্যবহার করেন। কিন্তু সংজ্ঞা দিলেই ব্যাখ্যা করা হয় না। প্রশ্ন যেমন তেমনি রহিল। যিনি পূর্ণ, তিনি কেমন করিয়া পূর্ণকল্প হইতে পারেন? যিনি নিত্য-শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত-স্বভাব, কেমন করিয়া তাঁহার সেই স্বভাবের অণুমাত্র ব্যতিক্রম হয়? হিন্দুগণ এ সম্বন্ধে সরল ও সত্যবাদী। তাঁহারা মিথ্যা তর্কযুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করিতে চাহেন নাই। তাঁহারা সাহসের সহিত এই প্রশ্নের সন্মুখীন হন এবং উত্তরে বলেন, ‘জানি না, কেমন করিয়া পূর্ণ আত্মা নিজেকে অপূর্ণ এবং জড়ের সহিত যুক্ত ও জড়ের নিয়মাধীন বলিয়া মনে করেন। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও ব্যাপারটি তো অনুভূত সত্য। প্রত্যকেই তো নিজিকে দেহ বলিয়া মনে করে।’ কেন এরূপ হইল, কেনই বা আত্মা এই দেহে রহিয়াছেন, এ তত্ত্ব তাঁহারা ব্যাখ্যা করিবার চেষ্টা করেন না। ইহা ঈশ্বরের ইচ্ছা-এরূপ বলিলে কিছুই ব্যাখ্যা করা হইল না। হিন্দুরা যে বলেন, ‘আমরা জানি না’, তাহা অপেক্ষা এই উত্তর আর বেশী কিছু নয়।

Tuesday, 5 July 2016

ধৈর্য ধর কিছুকাল হে বীর হৃদয়

ধৈর্য ধর কিছুকাল হে বীর হৃদয়

সূর্য যদি মেঘাচ্ছন্ন হয় কিছুক্ষণ 
যদি বা আকাশ হের বিষণ্ণ গম্ভীর, 
ধৈর্য ধর কিছুকাল হে বীর হৃদয়, 
         জয় তব জেনো সুনিশ্চয় ৷
শীত যায়, গ্রীষ্ম আসে তার পাছে পাছে,
ঢেউ পড়ে, ওঠে পুন তারি সাথে সাথে, 
আলো ছায়া আগাইয়া দেয় পরস্পরে; 
            হও তবে ধীর, স্থির, বীর ৷
জীবনকর্তব্য-ধর্ম  বড় তিক্ত জানি,
জীবনের সুখচয় বৃথা ও চঞ্চল,
লক্ষ্য আজ বহুদূরে ছায়ায় মলিন ; 
তবু চল অন্ধকারে হে বীর হৃদয়, 
              সবটুকু শক্তি সাথে লয়ে ৷
কর্ম নষ্ট নাহি হবে, কোন চেষ্টা হবে না বিফল,
আশা হোক উন্মূলিত, শক্তি - অস্তমিত,
কটিদেশ হতে তব জনমিবে উত্তরপুরুষ,
ধৈর্য ধর কিছুকাল হে বীর হৃদয়
      কল্যাণের নাহিক বিলয় ৷
জ্ঞানী গুণী মুষ্টিমেয় জীবনের পথে --
তবুও তাঁরাই হেথা হন কর্ণধার,
জনগন তাঁহাদের বোঝে বহু পরে; 
        চাহিও না কারো পানে,ধীরে লয়ে চল ৷
সাথে তব ক্রান্তদর্শী দূরদর্শী যাঁরা,
সাথে তব ভগবান সর্বশক্তিমান, 
আশিষ ঝরিয়া পড়ে তব শিরে-তুমি মহাপ্রাণ -
   সত্য হোক, শিব হোক সকলি তোমার ৷
 Hold on Yet a While, Brave Heart: খেতড়ি-মহারাজকে লিখিত ৷
অনুবাদ : ব্রহ্মচারী পূর্ণচৈতন্য ৷

আত্মা ও ঈশ্বর

               
যাহা কিছু স্থান ব্যাপ্ত করিয়া আছে, তাহারই রূপ আছে ৷ স্থান (দেশ)নিজেই রূপ বা আকার ধারণ করে ৷ হয় তুমি স্থানের (দেশের)মধ্যে অবস্থিত, নতুবা স্থান তোমাতে অবস্থিত ৷ আত্মা সর্বপ্রকার দেশের অতীত ৷ দেশ আত্মায়  অবস্থিত, আত্মা দেশে অবস্থিত নয় ৷
    আকার বা রূপ  কাল ও দেশের দ্বারা সীমাবদ্ধ  এবং কার্য-কারণের দ্বারা আবদ্ধ ৷ সমুদয় কাল আমাদের মধ্যে বিদ্যমান, আমরা কালের মধ্যে অবস্থিত নই ৷ যেহেতু আত্মা স্থান ও কালের মধ্যে অবস্থিত নন, সমুদয় কাল ও দেশ আত্মায় অবস্থিত; অতএব আত্মা সর্বব্যাপী ৷
  ঈশ্বর-সম্বন্ধে আমাদের ধারণা আমাদের নিজ নিজ চিন্তার প্রতিচ্ছবি ৷ 
  প্রকৃতির বিভিন্ন রূপের সহিত ঈশ্বরের অভেদ কল্পনা অর্থাৎ প্রকৃতি-পূজাই ছিল ঈশ্বর-সম্বন্ধে প্রাচীন যুগের ধারণা ৷ পরবর্তী ধাপ হইল গোষ্ঠীগত দেবতা ৷ রাজাকে ঈশ্বর-জ্ঞানে পূজা করা হইল পরবর্তী ক্রম ৷
  ঈশ্বর স্বর্গে অবস্থান করেন - এই ধারণা ভারতবর্ষ ব্যতীত সকল জাতির মধ্যেই প্রবল ৷ ঐ ধারণা অত্যন্ত অপরিণত ৷
  অবিচ্ছিন্ন জীবনের কল্পনা হাস্যজনক ৷ যে পর্যন্ত আমরা জীবন হইতে মুক্তি লাভ না করি, সে পর্যন্ত মৃত্যু হইতেও মুক্তি নাই ৷

স্বামীজীর বাণী ও রচনা
১০ম খণ্ড, পৃ: ১৫৯

Thursday, 30 June 2016

চৈতন্য ও প্রকৃতি

চৈতন্যকে চৈতন্যরূপে প্রত্যক্ষ করাই ধর্ম, জড়রূপে দেখা নয়।
ধর্ম হইতেছে বিকাশ। প্রত্যেককে নিজে উহা উপলব্ধি করিতে হইবে। খ্রীষ্টানগণের বিশ্বাস, মানবের পরিত্রাণের নিমিত্ত যীশুখ্রীষ্ট প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন। তোমাদের নিকট উহা একটি বিশিষ্ট মতবাদের উপর বিশ্বাস, এবং এই বিশ্বাসেই নিহিত তোমাদের মুক্তি। আমাদের নিকট মুক্তির সহিত বিশিষ্ট মতবাদের কোন প্রকার সম্পর্ক নাই। প্রত্যেকেরই স্বীয় মনোমত কোন মতবাদে বিশ্বাস থাকিতে পারে; অথবা সে কোন মতবাদে বিশ্বাস না করিতেও পারে। যীশুখ্রীষ্ট কোন এক সময়ে ছিলেন, অথবা তিনি কোনদিন ছিলেন না, তোমার নিকট এই উভয়ের পার্থক্য কি? জ্বলন্ত ঝোপের (burning bush) মধ্যে মুশার ঈশ্বর-দর্শনের সহিত তোমার কি সম্পর্ক? মুশা জ্বলন্ত ঝোপে ঈশ্বরকে দর্শন করিয়াছিলেন, এই তত্ত্বের দ্বারা তোমার ঈশ্বর-দর্শন প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাই যদি হয়, তবে মুশা যে আহার করিয়াছিলেন, ইহাই তোমার পক্ষে যথেষ্ট; তোমার আহার-গ্রহণে নিবৃত্ত হওয়া উচিত। একটি অপরটির মতই সমভাবে যুক্তিযুক্ত। আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন মহাপুরুষগণের বিবরণসমূহ আমাদিগকে তাঁহাদের পথে অগ্রসর হইতে ও স্বয়ং ধর্ম উপলব্ধি করিতে প্রণোদিত করে, ইহা ব্যতীত অপর কোন কল্যাণ সাধন করে না। যীশুখ্রীষ্ট, মুশা বা অপর কেহ যাহা কিছু করিয়াছেন, তাহা আমাদিগকে অগ্রসর হইতে উৎসাহিত করা ব্যতীত আর কিছুমাত্র সাহায্য করিতে পারে না।
প্রত্যেক ব্যক্তির একটি বিশেষ স্বভাব আছে, উহা তাহার প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য। ঐ বৈশিষ্ট্য তাহাকে অনুসরণ করিতেই হইবে। উহার মধ্য দিয়াই তাহাকে মুক্তির পথ খুঁজিতে হইবে। তোমার গুরুই তোমাকে বলিয়া দিবেন, তোমার নির্দিষ্ট পথ কোন্‌টি এবং সেই পথে তোমাকে পরিচালিত করিবেন। তোমার মুখ দেখিয়া তিনি বলিয়া দিবেন, তুমি কোন্ অবস্থায় ও কিরূপ সাধনার অধিকারী এবং ঐ বিষয়ে তোমাকে নির্দেশ দিবার ক্ষমতাও তাঁহার থাকিবে। অপরের পথ অনুসরণ করিবার চেষ্টা করা উচিত নয়, কেননা উহা তাঁহার জন্যই নির্দিষ্ট, তোমার জন্য নয়। নির্দিষ্ট পথ পাইলে নিশ্চিন্ত হইয়া থাকা ব্যতীত আর কিছুই করিবার নাই, স্রোতই তোমাকে মুক্তির দিকে টানিয়া লইয়া যাইবে। অতএব যখন সেই নির্ধারিত পথ পাইবে, তাহা হইতে ভ্রষ্ট হইও না। তোমার পন্থা তোমার পক্ষে শ্রেয়ঃ, কিন্তু উহা যে অপরের পক্ষেও শ্রেয়ঃ হইবে, তাহার কোন প্রমাণ নাই।
প্রকৃত আধ্যাত্মিক-শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি চৈতন্যকে চৈতন্যরূপেই প্রত্যক্ষ করেন, জড়রূপে নয়। চৈতন্যই প্রকৃতিকে গতিশীল করে, চৈতন্যই সত্য বস্তু। ক্রিয়ার অস্তিত্ব প্রকৃতির মধ্যেই বিদ্যমান, চৈতন্যে নয়। চৈতন্য সর্বদা এক, অপরিণামী ও শাশ্বত। চৈতন্য ও জড় প্রকৃতপক্ষে এক, কিন্তু চৈতন্য স্ব-স্বরূপে কখনই জড় নয়। জড় কখনও জড়সত্তা-রূপে চৈতন্য হইতে পারে না। আত্মা কখনও ক্রিয়া করেন না। কেনই বা করিবেন? আত্মা বিদ্যমান—ইহাই যথেষ্ট। আত্মা শুদ্ধ, সৎ ও নিরবচ্ছিন্ন। আত্মায় ক্রিয়ার কোন আবশ্যকতা নাই।
নিয়ম দ্বারা তুমি বদ্ধ নও। উহা তোমার মায়িক প্রকৃতির অন্তর্গত। মন প্রকৃতিরই এলাকায় ও নিয়মাধীন। সমগ্র প্রকৃতি স্বীয় কর্মজনিত নিয়মের অধীন এবং এই নিয়ম অলঙ্ঘনীয়। প্রকৃতির একটি নিয়মও যদি লঙ্ঘন করিতে সমর্থ হও, তবে মুহূর্তমধ্যে প্রকৃতি ধ্বংস হইবে, প্রকৃতি বলিয়া কিছু থাকিবে না। যিনি মুক্তিলাভ করেন, তিনিই প্রকৃতির নিয়ম ভাঙিয়া ফেলিতে সমর্থ, তাঁহার নিকট প্রকৃতি লয়প্রাপ্ত হয়; প্রকৃতির কোন প্রভাব আর তাঁহার উপর থাকে না। প্রত্যেকেই একদিন চিরকালের জন্য এই নিয়ম ভাঙিয়া ফেলিবে, আর তখনই প্রকৃতির সহিত তাহার দ্বন্দ্ব শেষ হইয়া যাইবে।
গভর্ণমেণ্ট, সমিতি প্রভৃতি অল্পবিস্তর ক্ষতিকর। সকল সমিতিই কতকগুলি দোষযুক্ত সাধারণ নিয়মের উপর স্থাপিত। যে মুহূর্তে তোমরা নিজেদের একটি সঙ্ঘে পরিণত করিলে, সেই মুহূর্ত হইতে ঐ সঙ্ঘের বহির্ভূত সকলের প্রতি বিদ্বেষ আরম্ভ হইল। যে কোন প্রতিষ্ঠানে যোগদানের অর্থ নিজের উপর গণ্ডী টানা ও স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা। প্রকৃত কল্যাণ হইতেছে সর্বোত্তম স্বাধীনতা। প্রত্যেক ব্যক্তিকে এই স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হইতে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। সাধুতা যত বাড়ে কৃত্রিম নিয়মও তত হ্রাস পায়। ঐগুলি বাস্তবিক পক্ষে নিয়মই নয়। কারণ—উহা যদি সত্যই নিয়ম হইত, তবে কখনই উহা লঙ্ঘন করা যাইত না। এই তথাকথিত নিয়মগুলি যে ভাঙিয়া ফেলা যায়, তাহাতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, ঐগুলি প্রকৃত নিয়ম নয়। যথার্থ নিয়ম অলঙ্ঘনীয়।
যখন কোন চিন্তা দমন করিয়া ফেল, তখন উহা স্প্রিং-এর ন্যায় কুণ্ডলী পাকাইয়া অদৃশ্যভাবে চাপা পড়িয়া থাকে মাত্র। সুযোগ পাইলেই মুহূর্তমধ্যে—দমনের ফলে সংহত সমস্ত রুদ্ধশক্তি লইয়া সবেগে বাহির হইয়া আসে, এবং তারপর যাহা ঘটিতে বহু সময় লাগিত, কয়েক মুহূর্তে তাহা ঘটিয়া যায়।
প্রতিটি ক্ষুদ্র সুখ বৃহৎ দুঃখ বহন করে। শক্তি এক—এক সময়ে যাহা আনন্দরূপে ব্যক্ত হয়, অন্য সময়ে তাহারই অভিব্যক্তি দুঃখ। কতকগুলি অনুভূতির অবসান হইলেই অপর কতকগুলি আরম্ভ হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নততর ব্যক্তিগণের কাহারও মধ্যে দুইটি, এমন কি একশত বিভিন্ন চিন্তা একই সময়ে কার্য করিতে থাকে।
হইতেছে স্বীয় স্বভাবের পরিণতি—মানসী ক্রিয়া অর্থে সৃষ্ট। শব্দ চিন্তার ও রূপ (আকার) শব্দের অনুসরণ করে। মনে আত্মা প্রতিফলিত হইবার পূর্বে মানসিক ও শারীরিক সর্বপ্রকার কার্য করিবার সঙ্কল্প রুদ্ধ করা প্রয়োজন।

Wednesday, 29 June 2016

স্বামীজীর বাণী

পাশ্চাত্যবাসীদের উদ্দ্যেশে আমার বাণী বীরত্বপূর্ণ। দেশবাসীর উদ্দেশে আমার বাণী বলিষ্ঠতর।
ঐশ্বর্যময় পাশ্চাত্যে চার বৎসর বাস করার ফলে ভারতবর্ষকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করিয়াছি। অন্ধকার দিকগুলি গাঢ়তর এবং আলোকিত দিকগুলি উজ্জ্বলতর হইয়াছে।
 পর্যবেক্ষণের ফল—ভারতবাসীর অধঃপতন হইয়াছে, এ কথা সত্য নহে।
প্রত্যেক দেশের যে সমস্যা, এখানেও সেই সমস্যা বিভিন্ন জাতির একীকরণ; কিন্তু ভারতবর্ষের ন্যায় এই সমস্যা অন্যত্র এত বিশালরূপে দেখা দেয় নাই।
 ভাষাগত ঐক্য, শাসন-ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি ধর্ম—একীকরণের শক্তিরূপে কাজ করিয়াছে।
অন্যান্য দেশে ইহা দৈহিক বলের দ্বারা সাধিত হইয়াছে, অর্থাৎ কোন গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে অপরাপর সংস্কৃতির উপর জোর করিয়া চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছে। ফলে ক্ষণস্থায়ী বিপুলপ্রাণশক্তিসম্পন্ন জাতীয় জীবন দেখা দিযাছে, তারপর উহার ধ্বংস হইয়াছে।
অপর পক্ষে ভারতবর্ষে সমস্যা যত বিরাট, উহা সমাধানের চেষ্টাও তত শান্ত উপায়ে দেখা দিয়াছে। প্রাচীনতম কাল হইতে ভিন্ন আচার-পদ্ধতি, বিশেষভাবে বিভিন্ন গোষ্ঠির ধর্মসম্প্রদায়কে স্বীকার করিয়া লওয়া হইয়াছে।

Friday, 10 June 2016

সর্ব ধর্ম সমন্বয় ও শ্রীরামকৃষ্ণ


  যত লোক দেখি, ধর্ম ধর্ম করে -- এ ওর সঙ্গে ঝগড়া করছে, ও ওর সঙ্গে ঝগড়া করছে ৷ হিন্দু,  মুসলমান, ব্রহ্মজ্ঞানী, শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব -- সব পরস্পর ঝগড়া ৷ এ বুদ্ধি নাই যে, যাঁকে কৃষ্ণ বলছ, তাঁকেই শিব, তাঁকেই আদ্যাশক্তি বলা হয়; তাঁকেই যিশু, তাঁকেই আল্লা বলা হয় ৷ এক রাম তাঁর হাজার নাম ৷ এরকম মনে করা ভাল নয় যে,  আমার ধর্মই ঠিক, আর অন্য সকলের ধর্ম ভুল ৷ সব পথ দিয়েই তাঁকে পাওয়া যায় ৷ আন্তরিক ব্যাকুলতা থাকলেই হল ৷ অনন্ত পথ -- অনন্ত মত ৷

   যে ধর্মই হোক, যে মতই হোক, সকলেই সেই এক ঈশ্বরকে ডাকছে; তাই কোন ধর্ম,  কোনও মতকে অশ্রদ্ধা বা ঘৃণা করতে নাই ৷

   ছাতের উপর উঠতে হলে মই,  বাঁশ,  সিঁড়ি ইত্যাদি নানা উপায়ে যেমন ওঠা যায়, তেমনই এক ঈশ্বরের কাছে যাবার অনেক উপায় আছে ৷ প্রত্যেক ধর্মই এক - একটি উপায় ৷
     যত মত, তত পথ ৷ যেমন এই কালীবাড়িতে আসতে হলে কেউ নৌকায়,  কেউ গাড়িতে, কেউ বা হেঁটে আসে, সেই রূপ ভিন্ন ভিন্ন মতের দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন লোকের সচ্চিদানন্দ লাভ হয়ে থাকে ৷

   ভগবান এক, সাধক ও ভক্তেরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ও রুচি অনুসারে তাঁর উপাসনা করে থাকে ৷ যেমন গৃহস্থেরা একটা বড় মাছ বাড়িতে এলে কেউ ঝোল করে, কেউ ভাজে, কেউ তেল-হলুদে চচ্চড়ি করে, কেউ ভাতে দেয়, কেউ কেউ বা অম্বল করে খেয়ে থাকে ৷ সেই রূপ যাদের যেমন রুচি,  তারা সেই রকম ভাবে ভগবানের সাধন-ভজন উপাসনা করে থাকে ৷

















Thursday, 9 June 2016

শ্রীশ্রীঠাকুরের অমৃতবাণী


  যে কেবল বলে 'আমি পাপী ' 'আমি পাপী ' সেই পড়ে যায় ৷ বরং বলতে হয়, আমি তাঁর নাম করেছি, আমার আবার পাপ কি? বন্ধন কি? 

  ঈশ্বরের নামে এমন বিশ্বাস হওয়া চাই  --- 'কি, আমি তাঁর নাম করেছি, আমার এখনও পাপ থাকবে!  আমার আবার পাপ কি? আমার আবার বন্ধন কি? 

  কারুকে নিন্দা কোরো না, পোকাটিরও না ৷ নারায়ণই এই সব রূপ ধরে রয়েছেন ৷ যেমন ভক্তি প্রার্থনা করবে তেমনই এটাও বলবে -- 'যেন কারও নিন্দা না করি ৷'

  মানুষ  -- যেমন বালিশের খোল; বালিশের ওপর দেখতে কোনটা লাল, কোনটা কাল;  কিন্তু সকলের ভেতর সেই একই তুলো ৷ মানুষ দেখতে কেউ সুন্দর, কেউ কাল,  কেউ সাধু, কেউ অসাধু;  কিন্তু সকলের ভেতর সেই এক ঈশ্বরই বিরাজ করছেন ৷

  সকলকে ভালবাসতে হয় ৷ কেউ পর নয় ৷ সর্বভূতেই সেই হরি আছেন ৷ তিনি ছাড়া কিছুই নাই ৷

Wednesday, 8 June 2016

অমৃতবাণী--সারদামা



ঠাকুর ছিলেন -- তিনি একটি দেখা (প্রত্যক্ষদর্শী ) লোক, তিনি সব দেখছেন,  তিনি সব জানেন,  তাঁর কথা বেদ - বাক্য ৷ তাঁর কথা যদি বিশ্বাস না করবে তো কি করবে ৷

তাঁর নিজের মুখের কথা -- তাঁকে স্মরণ করলে কোন দুঃখ থাকে না ৷

যে একবার ঠাকুরকে ডেকেছে তার আর ভয় নেই ৷ ঠাকুরকে ডাকতে ডাকতে, কৃপা হলে, তবে প্রেম - ভক্তি হয় ৷ তাঁর নাম করবে, তাঁতে খুব বিশ্বাস রাখবে ৷ সংসারে মা - বাপ ছেলেদের আশ্রয়স্থল, তেমনি ঠাকুরকে জ্ঞান করবে ৷ 

ঠাকুর আর কোথায়? তিনি ভক্তের নিকটে ৷ মনে ভাববে, আর কেউ না থাক, আমার একজন  'মা' আছেন! ঠাকুর যে বলে গেছেন, এখানকার সকলকে তিনি শেষ দিনে দেখা দেবেনই ৷

ঠাকুরের কাছে মনের কথা জানিয়ে প্রার্থনা করবে ৷প্রাণের কথা কেঁদে বলবে --দেখবে তিনি একেবারে কোলে বসিয়ে দেবেন ৷

ডাকতে থাক, ক্রমে হবে ৷ কত মু নি - ঋষিরা যুগ - যুগান্তর ধরে তপস্যা করে পেলে না, আর তোমাদের ফস্ করে হবে? এ জন্মে না হয় পরজন্মে হবে, পরজন্মে না হয় তার পরজন্মে হবে ৷ ভগবান  লাভ কি এতই সোজা? তবে এবার ঠাকুরের সোজা পথ,  তাই ৷
তোমাদের আর ভয় কি? তাঁর শরণাগত হয়ে থাকবে ৷ আর সর্বদা জানবে যে ঠাকুর তোমাদের পেছনে আছেন ৷..... ঠাকুরের শরণাগত হলে সব হয় ৷
সব সত্যি,  সব সত্যি,  কিছু মিথ্যে নয়,  মা ৷ উনিই (ঠাকুর ) প্রকৃতি, উনিই পুরুষ ৷














Saturday, 4 June 2016

Shodashi Puja


During this period of her stay at the temple –garden of Dakshineswar, Sri Ramakrishna felt a strong desire to worship the Goddess Shodashi, the Divine Mother of the universe. It was the new moon of June 5, 1872, an auspicious night for the worship of the Goddess Kali. Sri Ramakrishna made all the arrangements for it in his own room and instructed the Holy Mother to be present there at 9 pm. As desired by him, she appeared in time and occupied the seat which was reserved for the Goddess Shodashi. Sri Ramakrishna went through all the appropriate rites and formalities of worship in which the Holy Mother took the place of the Deity. In the stillness of night both the worshipper and the worshipped passed into spiritual ecstasy and were joined in a transcendental union in the Self. At the end of this worship he surrendered himself and the fruits of his lifelong Sadhana (spiritual practices) together with his rosary at the feet of the Holy Mother and saluted her. With this sacred ceremony, called in the scriptures the Shodashi-Puja or the worship of the Divine Mother Tripurasundari, was finished the long course of his spiritual practices. Thus the ultimate objective of a marital life was revealed and demonstrated in this twin personality in a manner unprecedented in the annals of mankind. It is a luminous instance of how the conjugal relation between the husband and the wife can be spiritualized and be the means to realization of the highest end of human existence. 

ষোড়শী পূজা কেন?

ষোড়শী পূজা কেন? 

অন্য বহুভাবে ও বহু কথাচ্ছলে শ্রীমায়ের সহিত ঠাকুরের সম্বন্ধ প্রকটিত হইয়া থাকিলেও ঐ অভিব্যক্তির ধারা পরিপূর্ণতা লাভ করিয়াছিল ষোড়শীপূজায় ৷ সে পূজার তাৎপর্য ঠাকুরের দিক হইতে আলোচনা না করিয়া মায়ের দিক হইতেই বুঝিতে চেষ্টা করিব ৷ যখন ঠাকুর আর মায়ের বিবাহ হয় তখন মা নিতান্তই ক্ষুদ্র বালিকা ৷ কামারপুকুরে অবস্থানের সময় ঠাকুর মাকে দিব্যপ্রেমের আস্বাদ দিয়াছিলেন  ও কামারপুকুর এবং দক্ষিণেশ্বরে তাঁহাকে লৌকিক ও দেবজীবনোচিত অপূর্ব সম্পদরাশিতে ভূষিত করিয়াছিলেন ৷ অধুনা নারীর দেবীত্বের উদ্বোধনের সময় সমাগত জানিয়া ও যাঁহাকে ঠাকুর স্বীয় লীলা সম্পূরণের জন্য রাখিয়া যাইবেন,  তাঁহাকে অন্তরের পূজা প্রদানপূর্বক নিজসকাশে ও জনসমাজে সম্মানিত ও মহিমামণ্ডিত এবং সেই দেবীকে স্বীয় শক্তিবিষয়ে অবহিত করিবার প্রয়োজন ছিল বলিয়াই ষোড়শীপূজার আয়োজন ৷ 

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :-
শ্রীমা সারদা দেবী
স্বামী গম্ভীরানন্দ

Friday, 3 June 2016

ষোড়শীপূজা


১২৭৯ সালের ২৪ জ্যৈষ্ঠ (৫ জুন, ১৮৭২) অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিণী -কালিকাপূজার দিন ৷ আজ  শ্রীশ্রী ঠাকুরের মনে শ্রীশ্রীজগদম্বাকে তাঁহার ষোড়শী (শ্রী বিদ্যা বা ত্রিপুরা সুন্দরী ) মূর্তি তে আরাধনা করিবার সাধ হইয়াছে ৷ পূজার আয়োজন মন্দিরে না হইয়া গুপ্তভাবে তাঁহারই কক্ষে হইয়াছে ৷ দীনু পূজারী ঠাকুরের ঘরে আসিয়া আয়োজন করিতে লাগিলেন ৷ যথাস্থানে পূজাদ্রব্য সজ্জিত হইল ৷ আরাধ্যা দেবীর কোন প্রতিমা না থাকিলেও তাঁহার জন্য আলিম্পনশোভিত পীঠ ঠাকুরের চৌকির উত্তরে পূজকের সম্মুখে স্থাপিত হইল ৷ সমস্ত আয়োজন শেষ করিয়া দীনু পূজারী চলিয়া গেলেন  ৷
ঠাকুর শ্রীমাকে পূর্বেই পূজাকালে উপস্থিত থাকিতে বলিয়া পাঠাইয়াছিলেন ৷ তিনি ঘরে আসিয়া নিবিষ্টমনে ঠাকুরের পূজা দেখিতে লাগিলেন ৷ ঠাকুর পূর্বমুখ হইয়া পশ্চিম দিকের দরজার কাছে বসিয়াছিলেন ৷ মন্ত্রোচ্চারণ সহকারে যথাবিধি পূর্বকৃত শেষ করিয়া তিনি শ্রীমাকে নির্দিষ্ট পীঠে বসিবার জন্য ইঙ্গিত করিলেন ৷ অর্ধবাহ্যদশায় আবিষ্ট শ্রীমা কেন,  কি করিতেছেন কিছুই না ভাবিয়া পশ্চিমাস্য হইয়া ঠাকুরের সম্মুখস্থ পীঠে উপবেশন করিলেন ৷ তখন মন্ত্রপূত কলসের জল লইয়া ঠাকুর বারংবার শ্রীমায়ের অভিষেক করিলেন ৷ তারপর মন্ত্র শ্রবন করিয়া প্রার্থনামন্ত্র উচ্চারণ করিলেন 

''হে বালে, হে সর্বশক্তির অধীশ্বরী মাতঃ ত্রিপুরাসু্ন্দরী, সিদ্ধিদ্বার উন্মুক্ত কর; ইঁহার (শ্রীমায়ের ) শরীর মনকে পবিত্র করিয়া ইঁহাতে আবির্ভূতা হইয়া সর্বকল্যাণ সাধন  কর ৷''

পরে শ্রীমায়ের অঙ্গে মন্ত্রসকলের যথাবিধি বিন্যাস  করিয়া সাক্ষাৎ দেবীজ্ঞানে ষোড়শোপচারে পূজা করিয়া ভোগ নিবেদন করিলেন ৷ বাহ্যজ্ঞানশূণ্যা শ্রীমা দেখিতে দেখিতে সমাধিরাজ্যে চলিয়া গেলেন,  ঠাকুরও অর্ধবাহ্যদশায় মন্ত্রোচ্চারণ করিতে করিতে সমাধিষ্ট হইলেন ৷
সে ভূমিতে আত্মসংস্থ পূজক ও পূজিতা আত্মস্বরূপে পূর্ণভাবে একীভূত হইলেন ৷ কিছুকাল এইপ্রকারে অতীত হইবার পর মধ্যরাতের অনেক পরে ঠাকুর অর্ধবাহ্যদশায় উপনীত হইয়া দেবীকে আত্মনিবেদন করিলেন ৷ অনন্তর আপনার সহিত নিজ সাধনার ফল এবং জপের মালা প্রভৃতি সর্বস্ব দেবীর শ্রীচরণে চিরতরে বিসর্জন দিয়া মন্ত্রোচ্চারণ করিতে করিতে তাঁহাকে প্রণাম করিলেন ---
'' মূর্তিমতী বিদ্যারূপিণী মানবীর দেহাবলম্বনে ঈশ্বরীর উপাসনাপূর্বক ঠাকুরের সাধনার পরিসমাপ্তি হইল ৷'' শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরানীরও দেবীমানবীত্বের পূর্ণ বিকাশের দ্বার অর্গলমুক্ত হইল ৷ পূজাশেষে বাহ্যভূমিতে আসিবার পর মনে মনে শ্রীশ্রীঠাকুর কে প্রণাম করিয়া শ্রী শ্রী মা নহবতে ফিরিলেন ৷
Courtesy : শ্রীমা সারদা দেবী--স্বামী গম্ভীরানন্দ

আত্মাকে জান; ওঠ, জাগ; ভীত হইও না.... স্বামী বিবেকানন্দ

আমার ভয় নাই,  মৃত্যু নাই; আমার ক্ষুদা নাই,  তৃষ্ণা নাই; আমি ব্রহ্ম, আমি ব্রহ্ম ৷ বিশ্বপ্রকৃতির সাধ্য নাই যে, আমাকে ধ্বংস করে ৷ প্রকৃতি আমার দাস ৷
সুতরাং যখনই অন্ধকার আসিবে, তখনই নিজের স্বরূপ প্রকাশ করিও,  দেখিবে -- সকল বিরুদ্ধ শক্তি বিলীন হইয়া যাইবে ৷ বিরুদ্ধ শক্তিগুলি তো স্বপ্ন মাত্র ৷ জীবনপথের বাধাবিঘ্নগুলি পর্বত প্রমান, দুর্লঙ্ঘ ও বিষাদময় বলিয়া মনে হইলেও এগুলি মায়া ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ ভয় করিও না,দেখিবে উহারা দূরে চলিয়া গিয়াছে ৷ বাধা চূর্ণ করিয়া ফেল, দেখিবে অদৃশ্য হইয়া গিয়াছে; পদদলিত কর, দেখিবে মরিয়া গিয়াছে ৷ ভীত হইও না ৷ বারবার বিফল হইয়াছ বলিয়া নিরাশ হইও না ৷ কাল নিরবধি, অগ্রসর হইতে থাক,বারবার তোমার শক্তি প্রকাশ করিতে থাক, আলোক  আসিবেই ৷ জগতে প্রত্যেকের কাছে সাহায্যপ্রার্থী হইতে পারি, কিন্তু তাহাতে কি ফল হইবে? কে তোমাকে সাহায্য করিবে? মৃত্যুর হাত কে এড়াইতে পারিয়াছে? কে তোমাকে মৃত্যু হইতে উদ্ধার করিবে? তোমার উদ্ধার - সাধন তোমাকেই করিতে হইবে ৷ তোমাকে সাহায্য করার সাধ্য অপর কাহারও নাই ৷ তুমি নিজেই তোমার পরম শত্রু,  আবার তুমিই তোমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু ৷ আত্মাকে জান; ওঠ, জাগ; ভীত হইও না ৷
বাণী ও রচনা, পৃঃ ২৯৩, ২য় খণ্ড (সুবিদিত রহস্য )

Tuesday, 31 May 2016

বাণী ও রচনা--স্বামী বিবেকানন্দ

যদি এই ব্রহ্মাণ্ড অনন্ত শক্তির বিকাশ হয়, তবে প্রলয়কালেও সেই অনন্ত শক্তি সঙ্কুচিতভাবে থাকিবে,ইহা স্বীকার করিতে হইবে ৷ অন্য কোন ভাব সম্ভব নয় ৷ অতএব ইহা নিশ্চিত যে,প্রত্যেক আত্মাই  অনন্ত ৷ আমাদের পদতলসঞ্চারী ক্ষুদ্রতম কীট হইতে মহত্তম সাধু পর্যন্ত সকলেরই ভিতর অনন্ত শক্তি, অনন্ত পবিত্রতা ও সমুদয় গুণই অনন্ত পরিমাণে রহিয়াছে ৷ প্রভেদ কেবল প্রকাশের তারতম্যে ৷ কীটে সেই মহাশক্তির অতি অল্প পরিমাণ বিকাশ হইয়াছে, তোমাতে তাহা অপেক্ষা অধিক, আবার অপর একজন দেবতুল্য মানবে তাহা অপেক্ষা অধিকতর শক্তির বিকাশ হইয়াছে -- এইমাত্র প্রভেদ ৷ কিন্তু সকলের মধ্যেই সেই এক শক্তি রহিয়াছে ৷...... কেবল এই কপাট, দেহরূপ এই কপাট আমাদের যথার্থ ও পূর্ণ বিকাশ হইতে দিতেছে না ৷ আর যতই এই দেহের গঠন উন্নত হইতে থাকে,যতই তমোগুণ রজেগুণে এবং রজোগুণ সত্ত্বগুণে পরিণত হয়,   ততই এই শক্তি  ও শুদ্ধত্ব প্রকাশিত হইতে  থাকে;  এই জন্যই আমরা পানাহার সম্বন্ধে এত সাবধান ৷

বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড,  পৃ: ৩১২

Monday, 30 May 2016

শিক্ষা (২)..... স্বামী বিবেকানন্দ

এই জগতে আমরা যে-সকল জ্ঞানলাভ করি, তাহারা কোথা হইতে আসে? উহারা আমাদের ভিতরেই রহিয়াছে ৷ কোন জ্ঞান কি বাহিরে আছে? -- আমাকে এক বিন্দু দেখাও তো ৷ জ্ঞান কখনো জড়ে ছিল না, উহা বরাবর মানুষের ভিতরেই ছিল ৷ জ্ঞান কেহ কখনো সৃষ্টি করে নাই; মানুষ উহা আবিষ্কার করে, ভিতর হইতে উহাকে বাহির করে, উহা ভিতরেই রহিয়াছে ৷ এই যে ক্রোশব্যাপী বৃহৎ বটবৃক্ষ, তাহা ঐ সর্ষপবীজের অষ্টমাংশের তুল্য ক্ষুদ্র বীজে ছিল -- ঐ মহাশক্তিরাজি উহার ভিতরে নিহিত রহিয়াছে ৷ আমরা জানি, একটি জীবাণুকোষের ভিতর সকল শক্তি, প্রখর বুদ্ধি কুণ্ডলীকৃত হইয়া অবস্থান করে; তবে অনন্ত শক্তি কেন না তাহাতে থাকিতে পারিবে? আমরা জানি, তাহা আছে ৷..... আমাদের ভিতর  শক্তি পূর্ব হইতেই অন্তর্নিহিত ছিল অব্যক্তভাবে, কিন্তু উহা ছিল নিশ্চয়ই ৷

বাণী ও রচনা, ২য় খণ্ড, পৃ: ২৭১-৭২

Sunday, 29 May 2016

প্রেম..... স্বামী বিবেকানন্দ

প্রেমকে আমরা একটি ত্রিকোণরূপে প্রকাশ করিতে পারি, উহার কোণগুলিই যেন উহার তিনটি অবিভাজ্য বৈশিষ্ট্যের প্রকাশক ৷ তিনটি কোণ ব্যতীত একটি ত্রিকোণ বা ত্রিভুজ সম্ভব নয় আর এই তিনটি লক্ষ্মণ ব্যতীত প্রকৃত প্রেমও সম্ভব নয় ৷ প্রেমরূপ এই ত্রিকোণের একটি কোণ : প্রেমে কোন দর-কষাকষি বা কেনাবেচার ভাব নাই ৷ যেখানে কোন প্রতিদানের আশা থাকে, সেখানে প্রকৃত প্রেম সম্ভব নয়;  সে-ক্ষেত্রে  উহা কেবল দোকানদারিতে পরিণত হয় ৷.... কোন বরলাভের জন্য, এমন কি মুক্তিলাভের জন্যও ভগবানের উপাসনা করা অধম উপাসনা! প্রেম কোন পুরস্কার চায় না, প্রেম সর্বদা প্রেমেরই জন্য ৷..... প্রেমরূপ ত্রিকোণের দ্বিতীয় কোণ : প্রেমে কোনরূপ ভয় নাই ৷ যাহারা ভগবানকে ভয়ে ভালবাসে,তাহারা মনুষ্যাধম; তাহাদের মনুষ্যভাব এখনও পূর্ণ বিকশিত হয় নাই ৷ তাহারা শাস্তির ভয়ে ভগবানকে উপাসনা করে ৷..... ভগবানকে দণ্ডের ভয়ে উপাসনা করা অতি নিম্নশ্রেণীর উপাসনা ৷..... প্রেম স্বভাবতই সমুদয় ভয়কে জয় করিয়া ফেলে ৷...... প্রেমরূপ ত্রিকোণের তৃতীয় কোণ : প্রেমে প্রতিদ্বন্দ্বীর স্থান নাই ৷ প্রেমিকের আর দ্বিতীয় ভালবাসার পাত্র থাকিবে না, কারণ প্রেমেই প্রেমিকের সর্বোচ্চ আদর্শ রূপায়িত ৷ যতদিন না ভালবাসার পাত্র আমাদের সর্বোচ্চ আদর্শ হইয়া দাঁড়ায়, ততদিন প্রকৃত প্রেম সম্ভব নয় ৷
বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড, (ভক্তিযোগ)

পুণ্যভূমি ভারত-স্বামী বিবেকানন্দ

ভারত পুণ্যভূমি, কর্মভূমি ৷.... যদি এই পৃথিবীর মধ্যে এমন কোন দেশ থাকে,যাহাকে 'পুণ্যভূমি' নামে বিশেষিত করা যাইতে পারে -- যদি এমন কোন স্থান থাকে যেখানে পৃথিবীর সকল জীবকেই তাহার কর্মফল ভুগিতে আসিতে হইবে -- যেখানে ঈশ্বরের অভিমুখী জীবমাত্রকেই পরিণামে আসিতে হইবে -- যেখানে মনুষ্যজাতির ভিতর সর্বাপেক্ষা অধিক ক্ষমা, দয়া, পবিত্রতা, শান্তভাব প্রভৃতি সদ্ গুণের বিকাশ হইয়াছে -- যদি এমন কোন দেশ থাকে, যেখানে সর্বাপেক্ষা অধিক আধ্যাত্মিকতা ও অন্তর্দৃষ্টির বিকাশ হইয়াছে, তবে নিশ্চয় বলিতে পারি, তাহা আমাদের মাতৃভূমি -- এই ভারতবর্ষ ৷ অতি প্রাচীনকাল হইতেই এখানে বিভিন্ন ধর্মের সংস্থাপকগণ আবির্ভূত হইয়া সমগ্র পৃথিবীকে বারংবার সনাতন ধর্মের পবিত্র আধ্যাত্মিক বন্যায় ভাসাইয়া দিয়াছেন ৷ এখান হইতেই উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম -- সর্বত্র দার্শনিক জ্ঞানের প্রবল তরঙ্গ বিস্তৃত  হইয়াছে ৷ আবার এখান হইতে তরঙ্গ উত্থিত হইয়া পৃথিবীর জড়বাদী সভ্যতাকে আধ্যাত্মিকতায় পূর্ণ করিবে ৷ অন্যান্য দেশের লক্ষ লক্ষ নরনারীর হৃদয়দগ্ধকারী জড়বাদরূপ  অনল নির্বান করিতে যে জীবনপ্রদ বারির প্রয়োজন, তাহা এখানেই রহিয়াছে ৷ বন্ধুগণ,  বিশ্বাস করুন ভারতই আবার পৃথিবীকে আধ্যাত্মিক তরঙ্গে প্লাবিত করিবে ৷
বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, (ভারতে বিবেকানন্দ )

শিক্ষা----স্বামী বিবেকানন্দ (১)

যে-কোন উপদেশ দুর্বলতা শিক্ষা দেয়, তাহাতে আমার বিশেষ আপত্তি; নর-নারী, বালক - বালিকা যখন দৈহিক মানসিক বা আধ্যাত্মিক শিক্ষা পাইতেছে, আমি তাহাদিগকে এই এক প্রশ্ন করিয়া থাকি -- তোমরা কি বল পাইতেছ? কারণ আমি জানি, একমাত্র সত্যই বল বা শক্তি প্রদান করে ৷ আমি জানি, সত্যই একমাত্র প্রাণপ্রদ, সত্যের দিকে না গেলে আমরা কিছুতেই বীর্যবান হইব না, আর বীর না হইলে সত্যেও  যাওয়া যাইবে না ৷ এইজন্যই যে-কোন মত, যে-কোন শিক্ষাপ্রণালী মনকে ও মস্তিষ্ককে দুর্বল করিয়া ফেলে, মানুষকে কুসংস্কারাবিষ্ট করিয়া তোলে, যাহাতে মানুষ অন্ধকারে হাতড়াইয়া বেড়ায়, যাহা সর্বদাই মানুষকে সকলপ্রকার বিকৃতমস্তিষ্কপ্রসূত অসম্ভব আজগুবী ও কুসংস্কারপূর্ণ বিষয়ের অন্বেষণ করায় -- আমি সেই প্রণালীগুলি পছন্দ করি না, কারণ মানুষের উপর তাহাদের প্রভাব বড় ভয়ানক, আর সেগুলিতে কিছুই উপকার হয় না, সেগুলি নিতান্ত নিষ্ফল ৷
বাণী ও রচনা, ২য় খণ্ড,  পৃ: ২১৬ (জ্ঞানযোগ)

Friday, 27 May 2016

Quotation of Swamiji..........

My boy, when death is inevitable, is it not better to die like heroes than as stocks and stones? And what is the use of living a day or two more in this transitory world? It is better to wear out than  to rust out --- specially for the sake of doing the least good to others. 

Tuesday, 17 May 2016

যা দেবী সর্বভূতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে



চেতনা - অন্তঃকরণবৃত্তি, জ্ঞানাত্মিকা মনোবৃত্তি ৷ চেতনা স্থূলে নামরূপ আকারে পরিব্যক্ত; সূক্ষ্মে প্রাণশক্তিরূপে এবং কারণে অব্যক্ত বীজরূপে অবস্থিত মা চৈতন্যরূপিণী ৷

'সারদে জ্ঞানদায়িকে ৷' শ্রীমা ছিলেন প্রজ্ঞা ও বিদ্যারূপিণী এবং জ্ঞানদায়িনী ৷ তিনি বহু নরনারীকে দীক্ষা ও উপদেশের দ্বারা তাদের অন্তর্নিহিত চৈতন্যকে জাগিয়ে দিয়েছেন ৷ শাস্ত্র বলেন, 'জ্ঞানাদেব মুক্তিঃ' (জ্ঞানেই মুক্তি )৷ মা বলেছেন : ''বাসনাই সকল দুঃখের মূল, বার বার জন্মমৃত্যুর কারণ,  আর মুক্তিপথের অন্তরায় ৷..... নির্বাসনা যদি হতে পার, এক্ষুনি (তত্ত্বজ্ঞান) হয় ৷''

মা অন্তরঙ্গদের আশীর্বাদ করতেন, ''জ্ঞান চৈতন্য হোক ৷'' কোনও সন্তানদের বক্ষঃস্থল ও মস্তকে জপ করে দিতেন;  দু একস্থলে পৃষ্ঠদেশে হাত  বুলিয়ে 'কুণ্ডলিনী জাগুক' বলে আশীর্বাদ করতেন ৷

শ্রীমা সারদা আর সাধু নাগ মহাশয়


বেলা আন্দাজ দশটা ৷ ভক্তশ্রেষ্ঠ নাগ মহাশয় আসিয়াছেন - শ্রীমার দর্শনে ৷ তাঁহাকে দেখিয়া শ্রীমাকে সংবাদ দিলে তিনি প্রসাদ হাতে ভক্তের জন্য সিঁড়ির নিকট পর্যন্ত অগ্রসর হইয়া আসিয়া অপেক্ষা করিতে থাকেন ৷ এদিকে নাগ মহাশয় শ্রীমার বাটীর সদর দরজা হইতে '' মহামায়ী, মহামায়ী '' শব্দ করিতে করিতে সাষ্টাঙ্গে অগ্রসর  হইতে থাকিলেন - সমস্ত সিঁড়িটিও সেই ভাবে উঠিলেন ৷ উপরে পৌঁছিলে শ্রীমা '' এস বাবা, এস'' বলিলে তিনি ''মহামায়ী, মহামায়ী'' বলিয়া মাথা খুঁড়িয়া প্রণাম করিলেন ৷ শ্রীমা ছাদের  সিঁড়ির প্রথম ধাপটিতে বসিয়া তাঁহাকে উঠিতে বলিলে তিনি নতজানু হইলেন - সর্বাঙ্গ কাঁপিতেছে, নয়নদ্বয় হইতে ধারার পর ধারা নির্গত হইয়া গণ্ডযুগল বহিয়া পরিতেছে ৷ শ্রীমা বলিলেন  : '' এস, ঠাকুরের প্রসাদ পাও ৷'' তিনি বলিলেন : ''মহামায়ীর প্রসাদ !'' শ্রীমা নিজের জিহ্বায় একটুকু ঠেকাইয়া প্রসাদ করিয়া দিলে  তিনি মুখ খুলিলেন ৷ শ্রীমা তাঁহাকে একটু একটু করিয়া খাওয়াইতে থাকিলেন আর তিনি বালকের ন্যায় খাইতে লাগিলেন ৷ গণ্ডদ্বয় প্লাবিত হইতে থাকিল ৷ প্রসাদ খাওয়াইয়া শ্রীমা জল এক এক ঢোক করিয়া মুখে দিতে থাকিলেন আর তিনি খাইতে থাকিলেন ৷ এইপ্রকারে প্রসাদ খাওয়াইবার পর শ্রীমা হাত ধুইয়া আসিয়া দক্ষিণ হস্ত তাঁহার মস্তকে স্পর্শ করাইয়া আশীর্বাদ করিলে তিনি ''মহামায়ী, মহামায়ী'' কহিতে কহিতে বরাবর পাছু হটিয়া অবতরণ করিলেন ৷ আর শ্রীমা যতক্ষণ তাঁহাকে দেখা যায়,  ততক্ষণ অনিমেষনয়নে দেখিতে লাগিলেন  ৷ -- এ এক অপার্থিব দৃশ্য! 

Monday, 16 May 2016

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী....................


নিজের উপর বিশ্বাস না আসিলে ঈশ্বরে বিশ্বাস আসে না। ভাবিও না তোমরা দরিদ্র, ভাবিও না তোমরা বন্ধুহীন; কে কোথায় দেখিয়াছে টাকায় মানুষ করিয়াছে! মানুষই চিরকাল টাকা করিয়া থাকে। জগতের যা কিছু উন্নতি, সব মানুষের শক্তিতে হয়েছে, উৎসাহের শক্তিতে হইয়াছে। বিশ্বাসের শক্তিতে হইয়াছে। প্রাচীন ধর্ম বলিত, যে ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে সে নাস্তিক। নতুন ধর্ম বলিতেছে, যে আপনাতে বিশ্বাস স্থাপন না করে সে ই নাস্তিক।
নিজের উপর বিশ্বাস-ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস। ইহাই উন্নতি লাভের একমাত্র উপায়। তোমার যদি এ দেশীয় পুরাণের তেত্রিশ কোটি দেবতার উপর এবং বৈদেশিকেরা মধ্যে মধ্যে যে সকল দেবতার আমদানি করিয়াছে, তাহাদের সবগুলির উপরই বিশ্বাস থাকে ,অথচ যদি তোমার আত্মবিশ্বাস না থাকে, তবে তোমার কখনই মুক্তি হইবে না। নিজের উপর বিশ্বাস সম্পন্ন হও - সেই বিশ্বাসসম্পন্ন হও - সেই বিশ্বাসবলে নিজের পায়ে নিজে দাড়াও এবং বীর্যবান হও।
মানুষকে সর্বদা তাহার দুর্বলতার বিষয় ভাবিতে বলা তাহার দুর্বলতার প্রতীকার নয়- তাহার শক্তির কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়াই প্রতিকারের উপায়। তাহার মধ্যে যে শক্তি পূর্ব হইতে বিরাজিত ,তাহার বিষয় স্মরণ করাইয়া দাও।
সাফল্য লাভ করিতে হইলে প্রবল অধ্যবসায় ,প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকা চাই। অধ্যবসায়শীল সাধক বলেন,' আমি গণ্ডূষে সমুদ্র পান করিব। আমার ইচ্ছামাত্র পর্বত চূর্ণ হইয়া যাইবে।' এইরূপ তেজ, এইরূপ সংকল্প আশ্রয় করিয়া খুব দৃঢ়ভাবে সাধন কর। নিশ্চয়ই লক্ষে উপনীত হইবে।
তোমাদের স্নায়ু সতেজ কর। আমাদের আবশ্যক - লৌহের মত পেশী ও বজ্রদৃঢ় স্নায়ু। আমরা অনেক দিন ধরিয়া কাঁদিয়াছি; এখন আর কাদিবার প্রয়োজন নাই, এখন নিজের পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াইয়া মানুষ হও।
পৃথিবীর ইতিহাস কয়েকজন আত্মবিশ্বাসী মানুষেরই ইতিহাস। সেই বিশ্বাসই ভিতরের দেবত্ব জাগ্রত করে। তুমি সব কিছু করিতে পার।
মনে করিও না, তোমরা দরিদ্র। অর্থই বল নহে ; সাধুতাই-পবিত্রতাই বল। আপনাতে বিশ্বাস রাখো। প্রবল বিশ্বাসই বড় কাজের জনক।
হে বীরহৃদয় যুবকগণ ,তোমরা বিশ্বাস কর যে ,তোমরা বড় বড় কাজ করবার জন্য জন্মেছ। ওঠ, জাগো, আর ঘুমিও না; সকল অভাব, সকল দুঃখ ঘুচাবার শক্তি তোমাদের ভিতরেই আছে। এ কথা বিশ্বাস করো, তা হলেই ঐ শক্তি জেগে উঠবে।

শ্রীমা--নানা ভাবে


শ্রীমা রঙ্গরসে বিশেষ পটু ছিলেন ৷ দুইটি চরিত্রবিশেষ অবলম্বন করিয়া একসময়ে এমন পারদর্শিতার সহিত হাতমুখ নাড়িয়া বর্ণনা করেন, যেন বোধ হয় সত্যই অভিনয় করিতেছেন ৷ কিন্তু ঐরূপ করিতে করিতে অকস্মাৎ গম্ভীর হইয়া বলেন  : ''আমার ছেলেরা যেন কেউ ওরকম না হয় ৷ নেড়ানেড়ীর দল সৃষ্টি করার চেয়ে েন ববে করে গিয়ে ৷ আমার অনুমতি রইল ৷'' ঐ ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে একজন কালে-ভদ্রে শ্রীমাকে প্রণাম করিতে আসিতেন ৷  শ্রীমা, কয়েকটি অন্তরঙ্গ ব্যতীত যেভাবে সচরাচর চাদর মুড়ি দিয়া দাঁড়াইয়া প্রণাম গ্রহণ করিতেন,  এক্ষেত্রেও তাহাই করিতেন এবং সে-লোকটি প্রণাম করিয়া চলিয়া গেলে, আমরা একাধিকবার লক্ষ্য করিয়াছি, শ্রীমাকে তাঁহার চাদর ও কাপড়ে গঙ্গাজল ছিটাইবার পর চরণদ্বয় গঙ্গাজলে ধুইতে ৷

Sunday, 15 May 2016

শ্রীশ্রীমায়ের জীবনের কথা



একবার শ্রীমা কলিকাতায় আসিলে তাঁহার শরীরে বসন্ত দেখা দেয় ৷ বাগবাজার স্ট্রীটের এক শীতলার পূজারীর চিকিৎসাধীন থাকেন ৷ নিত্য সে-ব্রাহ্মণ আসিত এবং নিত্য তাহার বিদায়কালে শ্রীমা গলবস্ত্রা হইয়া তাহার পদধূলি গ্রহণ করিতেন ৷ শ্রীমাকে ঐ চরিত্রহীন ব্রাহ্মণের  পদধূলি লইতে দেখিয়া আমরা বড়ই ব্যথিত হই ৷ থাকিতে না পারিয়া একদিন শ্রীমাকে ঐরূপ করিতে নিষেধও করিয়া বসি ৷ তিনি উত্তরে  বলেন : '' কি জান বাবা, হাজার হোক ব্রাহ্মণ -- ভেকের মান দেওয়াই উচিত ৷ ঠাকুর তো আর ভাঙতে আসেননি  ৷''

সন্ন্যাসীর গীতি

উঠাও সন্ন্যাসী, উঠাও সে তান,হিমাদ্রী-শিখরে উঠিল যে গান –গভীর অরণ্যে, পর্বত-প্রদেশে,সংসারের তাপ যথা নাহি পশে –যে সঙ্গীত-ধ্বনি-প্রশান্ত-লহরীসংসারের রোল উঠে ভেদ করি ;কাঞ্চন কি কাম কিংবা যশ-আশযাইতে না পারে কভু যার পাশ,যথা সত্য-জ্ঞান-আনন্দ-ত্রিবেণী –সাধু যায় স্নান করে ধন্য মানি –উঠাও সন্ন্যাসি, উঠাও সে তান,গাও গাও গাও, গাও সেই গান –ওঁ তৎ সৎ ওঁ২ভেঙ্গে ফেল শীঘ্র চরণ-শৃঙ্খল –সোনার নির্মিত হলে কি দুর্বল,হে ধীমান, তারা তোমার বন্ধনে ?ভাঙ্গ শীঘ্র তাই ভাঙ্গ প্রাণপণে।ভালবাসা-ঘৃণা, ভাল-মন্দ-দ্বন্দ্ব,ত্যজহ উভয়ে, উভয়েই মন্দ।আদর দাসেরে, কশাঘাত কর,দাসত্ব-তিলক ভালের উপর ;স্বাধীনতা-বস্তু কখন জানে না,স্বাধীন আনন্দ কভু তো বুঝে না।তাই বলি, ওহে সন্ন্যাসিপ্রবর,দূর কর দুয়ে অতীব সত্বর ;কর কর গান, কর নিরন্তর –ওঁ তৎ সৎ ওঁ৩যাক অন্ধকার, যাক সেই তমঃ,আলেয়ার মত বুদ্ধির বিভ্রমঘটায়ে আঁধার হইতে আঁধারেল’য়ে যায় এই ভ্রান্ত জীবাত্মারে।জীবনের এই তৃষা চিরতরেমিটাও জ্ঞানের বারি পান করে।এই তম-রজ্জু জীবাত্মা-পশুরেজন্মমৃত্যু-মাঝে আকর্ষণ করে।সে-ই সব জিনে – নিজে জিনে যেই,ফাঁদে পা দিও না জেনে তত্ত্ব এই।বলহ সন্ন্যাসি, বল বীর্যবান্,করহ আনন্দে কর এই গান –ওঁ তৎ সৎ ওঁ৪‘কৃত কর্মফল ভুঞ্জিতে হইবে,’বলে লোকে, ‘হেতু কার্য প্রসবিবে,শুভ কর্মে – শুভ, মন্দে – মন্দফল,এ নিয়ম রোধে নাই কারো বল।এ মর-জগতে সাকার যে জন,শৃঙ্খল তাহার অঙ্গের ভূষণ।’সত্য সব, কিন্তু নামরূপ-পারেনিত্যমুক্ত আত্মা আনন্দ বিহরে।জানো ‘তত্ত্বমসি’, করো না ভাবনা –করহ সন্ন্যাসি, সদাই ঘোষণা –ওঁ তৎ সৎ ওঁ৫সত্য কিবা তারা জানে না কখন,সদাই যাহারা দেখয়ে স্বপন –পিতা মাতা জায়া অপত্য বান্ধব –আত্মা তো কখন নহে এই সব ;নাহি তাহে কোনো লিঙ্গালিঙ্গভেদনাহিক জনম, নাহি খেদাখেদ।কার পিতা তবে, কাহার সন্তান ?কার বন্ধু, শত্রু কাহার ধীমান ?একমাত্র যেবা – যেবা সর্বময়,যাহা বিনা কোনো অস্তিত্বই নয়,‘তত্ত্বমসি’, ওহে সন্ন্যাসিপ্রবর,উচ্চরবে তাই এই তান ধর –ওঁ তৎ সৎ ওঁ৬একমাত্র মুক্ত জ্ঞাতা আত্মা হয়,অনাম অরূপ অক্লেদ নিশ্চয় ;তাঁহার আশ্রয়ে এ মোহিনী মায়াদেখিছে এসব স্বপনের ছায়া ;সাক্ষীর স্বরূপ – সদাই বিদিত,প্রকৃতি জীবাত্মারূপে প্রকাশিত ;‘তত্ত্বমসি’, ওহে সন্ন্যাসিপ্রবর,ধর ধর ধর, উচ্চে তান ধর –ওঁ তৎ সৎ ওঁ৭অন্বেষিছ মুক্তি কোথা বন্ধুবর ?পাবে না তো হেথা, কিম্বা এর পর ;শাস্ত্রে বা মন্দিরে বৃথা অন্বেষণ ;নিজ হস্তে রজ্জু – যাহে আকর্ষণ।ত্যজ অতএব বৃথা শোকরাশি,ছেড়ে দাও রজ্জু, বল হে সন্ন্যাসি –ওঁ তৎ সৎ ওঁ৮দাও দাও দাও সবারে অভয়,বল, ‘প্রাণিজাত, করো নাকো ভয় ;ত্রিবিদ পাতাল থাকো যে যেখান,সকলের আত্মা আমি বিদ্যমান ;স্বরগ-নরক ইহমুত্র-ফলআশা ভয় আমি ত্যজিনু সকল।’এইরূপে কাটো মায়ার বন্ধন ;গাও গাও গাও করে প্রাণপণ –ওঁ তৎ সৎ ওঁ৯ভেবো না দেহের হয় কিবা গতি,থাকে কিম্বা যায় – অনন্ত নিয়তি –কার্য-অবশেষ হয়েছে উহার,এবে ওতে প্রারব্ধের অধিকার ;কেহ বা উহারে মালা পরাইবে,কেহ বা উহারে পদ প্রহারিবে ;চিত্তের প্রশান্তি ভেঙ্গো না কখন,সদাই আনন্দে রহিবে মগন ;কোথা অপযশ – কোথা বা সুখ্যাতি ?স্তাবক-স্তাব্যের একত্ব-প্রতীতি,অথবা নিন্দুক-নিন্দ্যের যেমতি।জানি এ একত্ব-আনন্দ অন্তরেগাও হে সন্ন্যাসি, নির্ভীক অন্তরে –ওঁ তৎ সৎ ওঁ১০পশিতে পারে না কভু তথা সত্যকাম-লোভ-বশে যেই হৃদি মত্ত ;কামিনীতে করে স্ত্রীবুদ্ধি যে জন,হয় না তাহার বন্ধন-মোচন ;কিম্বা কিছু দ্রব্যে যার অধিকার,হউক সামান্য – বন্ধন অপার ;ক্রোধের শৃঙ্খল কিম্বা পায়ে যার,হইতে না পারে কভু মায়া পার।ত্যজ অতএব, এসব বাসনা,আনন্দে সদাই কর হে ঘোষণা –ওঁ তৎ সৎ ওঁ১১সুখতরে গৃহ করো না নির্মাণ,কোন্ গৃহ তোমা ধরে, হে মহান্ ?গৃহছাদ তব অনন্ত আকাশ,শয়ন তোমার সুবিস্তৃত ঘাস ;দৈববশে প্রাপ্ত যাহা তুমি হও,সেই খাদ্যে তুমি পরিতৃপ্ত রও ;হউক কুৎসিত, কিম্বা সুরন্ধিত,ভুঞ্জহ সকলি হয়ে অবিকৃত।শুদ্ধ আত্মা যেই জানে আপনারেকোন্ খাদ্য-পেয় অপবিত্র করে ?হও তুমি চল-স্রোতস্বতী মত,স্বাধীন উন্মুক্ত নিত্য-প্রবাহিত।উঠাও আনন্দে, উঠাও সে তান,গাও গাও গাও সদা এই গান –ওঁ তৎ সৎ ওঁ১২তত্ত্বজ্ঞের সংখ্যা মুষ্টিমেয় হয়,অ-তত্ত্বজ্ঞ তোমা হাসিবে নিশ্চয় ;হে মহান, তোমা করিবেক ঘৃণা,তাহাদের দিকে চেয়েও দেখো না।স্বাধীন, উন্মুক্ত – যাও স্থানে স্থানে,অজ্ঞান হইতে উদ্ধারো অজ্ঞানে –মায়া-আবরণে ঘোর অন্ধকারে,নিয়তই যারা যন্ত্রণায় মরে।বিপদের ভয় করো না গণনা,সুখ-অন্বেষণে যেন হে মেতো না ;যাও এ উভয় দ্বন্দ্ব-ভূমি-পারেগাও গাও গাও, গাও উচ্চস্বরে –ওঁ তৎ সৎ ওঁ১৩এইরূপে বন্ধো, দিন পরে দিন,করমের শক্তি হয়ে যাবে ক্ষীণ ;আত্মার বন্ধন ঘুচিয়া যাইবে,জনম তাহার আর না হইবে ;আমি বা আমার কোথায় তখন ?ঈশ্বর – মানব – তুমি – পরিজন ?সকলেতে আমি – আমাতে সকল –আনন্দ, আনন্দ, আনন্দ কেবল।সে আনন্দ তুমি, ওহে বন্ধুবর,তাই হে আনন্দে ধর তান ধর –ওঁ তৎ সৎ ওঁ

Friday, 13 May 2016

সপ্তভূমি -- অহংকার কখন যায় -- ব্রহ্মজ্ঞানের অবস্থা

[
“জ্ঞানলাভ হলে অহংকার যেতে পারে। জ্ঞানলাভ হলে সমাধিস্থ হয়। সমাধিস্থ হলে তবে অহং যায়। সে জ্ঞানলাভ বড় কঠিন।

“বেদে আছে যে, সপ্তমভূমিতে মন গেলে তবে সমাধি হয়। সমাধি হলেই তবে অহং চলে যেতে পারে। মনের সচরাচর বাস কোথায়? প্রথম তিনভূমিতে। লিঙ্গ, গুহ্য, নাভি -- সেই তিনভূমি, তখন মনের আসক্তি কেবল সংসারে -- কামিনী-কাঞ্চনে। হৃদয়ে যখন মনের বাস হয়, তখন ঈশ্বরীয় জ্যোতিঃদর্শন হয়। সে ব্যক্তি জ্যোতিঃদর্শন করে বলে ‘একি!’ ‘একি!’ তারপর কণ্ঠ। সেখানে যখন মনের বাস হয়, তখন কেবল ঈশ্বরীয় কথা কহিতে ও শুনিতে ইচ্ছা হয়। কপালে -- ভ্রূমধ্যে -- মন গেলে তখন সচ্চিদানন্দরূপে দর্শন হয়, সেই রূপের সঙ্গে আলিঙ্গন স্পর্শন করতে ইচ্ছা হয়, কিন্তু পারে না। লণ্ঠনের ভিতর আলো দর্শন হয় কিন্তু স্পর্শ হয় না; ছুঁই ছুঁই বোধ হয়, কিন্তু ছোঁয়া যায় না। সপ্তমভূমিতে মন যখন যায়, তখন অহং আর থাকে না -- সমাধি হয়।”

বিজয় -- সেখানে পৌঁছিবার পর যখন ব্রহ্মজ্ঞান হয়, মানুষ কি দেখে?

শ্রীরামকৃষ্ণ -- সপ্তমভূমিতে মন পৌঁছিলে কি হয় মুখে বলা যায় না।

“জাহাজ একবার কালাপানিতে গেলে আর ফিরে না। জাহাজের খপর পাওয়া যায় না। সমুদ্রের খপরও জাহাজের কাছে পাওয়া যায় না।

“নুনের ছবি সমুদ্র মাপতে গিছিল। কিন্তু যাই নেমেছে, অমনি গলে গেছে! সমুদ্র কত গভীর কে খপর দিবেক? যে দিবে, সে মিশে গেছে। সপ্তমভূমিতে মনের নাশ হয়, সমাধি হয়। কি বোধ হয়, মুখে বলা যায় না।”

Thursday, 12 May 2016

- : শ্রী শ্রী মায়ের জীবনকথা : -



"ওঁ যথাগ্নের্দাহিকা শক্তিঃ রামকৃষ্ণে স্থিতা হি যা।
সর্ববিদ্যাস্বরূপাং তাং সারদাং প্রণমাম্যহম।।"

   শ্রীমায়ের হৃদয় দেশের দুঃখদুর্দশায় বিচলিত হইত; সময়বিশেষে বিদেশী শাসকের শোষণনীতির প্রতিবাদে তাঁহার চক্ষে অগ্নিস্ফুরণ কিংবা অশ্রুবিসর্জন হইত। কিন্তু সমস্ত দুঃখদৈন্যের একমাত্র প্রতিকার রূপে তিনি সর্বদা শ্রীরামকৃষ্ণকে ধরিয়া থাকিতেন এবং অপরকেও তাহাই করিতে বলিতেন। বস্তুত তাঁহার সমস্ত চিন্তা ও কার্য ছিল রামকৃষ্ণ-কেন্দ্রিক।

   তখন স্বদেশীর যুগ; তাই জনৈক দেশভক্ত যখন জিজ্ঞাসা করিলেন, "মা, এদেশের দুঃখ-দুর্দশা কি দূর হবে না?" তখন শ্রীমা উত্তর দিয়াছিলেন যে, ঠাকুর ঐ জন্যই আসিয়াছিলেন। সুতরাং কোয়ালপাড়ার ভক্তদের কর্মোদ্যমে আকৃষ্ট হইলেও তিনি সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন যে, আশ্রমের অধিষ্ঠাতৃরূপে শ্রীরামকৃষ্ণেরই বিরাজমান থাকা আবশ্যক, নতুবা কর্মীরা অচিরে পথভ্রষ্ট হইতে পারেন। তাই তিনি কলকাতা যাইবার পথে আশ্রমে ঠাকুরকে প্রতিষ্ঠিত করিতে চাহিলেন।

   অগ্রহায়ণের আরম্ভ। তখন ভোরে খুব ঠান্ডা হইলেও শ্রীমাকে কোয়ালপাড়ায় গিয়া পূজা করিতে হইবে। তাই তিনি সূর্যোদয়ের পূর্বেই পালকিতে রওয়ানা হইলেন। লক্ষ্মীদিদি, শ্রীমায়ের ভ্রাতুষ্পুত্রী মাকু ও রাধু এবং রাধুর স্বামী মন্মথ ভিন্ন ভিন্ন পালকিতে যাত্রা করিলেন। ছোটমামী, নলিনীদিদি, ভুদেব প্রভৃতি অন্যান্য সকলে গোযানে উঠিলেন এবং ব্রহ্মচারী প্রকাশ মহারাজ সকলের তত্ত্বাবধায়ক রূপে চলিলেন।

   কোয়ালপাড়া আশ্রমে শ্রীমা ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করিবেন বলিয়া ভক্তবৃন্দ যথাসাধ্য আয়োজন করিয়াছেন। মা আশ্রমে পৌঁছিয়া স্নান সারিয়া আসিলেন এবং বেদিতে শ্রীশ্রীঠাকুরের ও আপনার ফটো স্থাপনপূর্বক যথাবিধি পূজা করিলেন। তাঁহার আদেশে কিশোরী মহারাজ হোমাদি করিলেন। পূজাশেষে সকলে প্রসাদ পাইলেন।

   ইহার পর মধ্যাহ্ন ভোজনের পূর্বে কেদারবাবুর মা, লক্ষ্মীদিদি ও নলিনীদিদির সহিত শ্রীমা কেদারবাবুদের বাড়িতে পদব্রজে বেড়াইতে গেলেন। প্রকাশ মহারাজ ইহা শুনিয়া বিরক্ত হইয়া আশ্রমবাসীদিগকে বলিলেন, "তোমরা মার মর্যাদা কিছুই জান না। আমাকে না বলে তাঁকে হাঁটিয়ে নিয়ে গেলে কেন? যাই হোক, মাকে ফেরবার সময় পালকি করে নিয়ে এসো।" 

   এই বলিয়া নিজেই পালকি, বেহারা ও আশ্রমবাসী দুইজনকে লইয়া কেদারবাবুর বাড়ির দিকে চলিলেন। মধ্য পথে মাতাঠাকুরানীর সহিত দেখা হইলে প্রকাশ মহারাজ তাঁহাকে পালকিতে উঠিয়া বসিতে অনুরোধ করিলেন। 

   শ্রীমা বিরক্তির সহিত উঠিলেন বটে, কিন্তু আশ্রমে আসিয়াই তাঁহাকে ভর্ৎসনা করিয়া বলিলেন, "এ আমাদের পাড়াগাঁ। কোয়ালপাড়া হলো আমার বৈঠকখানা। এইসব ছেলেরা আমার আপনার লোক। আমি এদেশে এসে একটু স্বাধীনভাবে চলব ফিরব। কলকাতা থেকে এসে হাঁপ ছেড়ে বাঁচি। তোমরা তো সেখানে আমাকে খাঁচার ভিতর পুরে রাখ আমাকে সর্বদা সঙ্কুচিত হয়ে থাকতে হয়। এখানেও যদি তোমাদের কথামত পা-টি বাড়াতে হয়, তা আমি পারব না - শরৎকে লিখে দাও।"

   তখন প্রকাশ মহারাজ ক্ষমা চাহিয়া কহিলেন যে, তাঁহার নিজের দিক হইতে যাহাতে ত্রুটি না হয়, ঐরূপ করিতে গিয়াই তিনি অজ্ঞাতসারে মায়ের স্বাধীনতাকে খর্ব করিয়া ফেলিয়াছেন।

   স্থির হইল যে, সন্ধ্যা ছয়টার পূর্বেই পুনরায় যাত্রা আরম্ভ হইবে। অতএব রাস্তার খাবার উহার আগেই প্রস্তুত রাখিতে হইবে। কিন্তু আশ্রমবাসীদের যথাশক্তি চেষ্টা সত্ত্বেও সময়মত কাজ শেষ হইল না। প্রকাশ মহারাজ ইহাতে বিরক্ত হইতেছেন দেখিয়া আশ্রমবাসীরা পরামর্শ দিলেন যে, কলকাতার যাত্রীরা রওয়ানা হইয়া যাইতে পারেন; পরে যেমন করিয়াই হউক পথে খাবার পৌঁছাইয়া দেওয়া হইবে।

   শ্রীমা সকল কথা শুনিয়া প্রকাশ মহারাজকে বলিলেন, "তুমি মাথা গরম করে এত রাগারাগি করছ কেন? এ আমাদের পাড়াগাঁ, কলকাতার মতো এখানে কি সব ঘড়ির কাঁটায় হয়ে ওঠে? দেখছ সকাল থেকে ছেলেরা কি খাটাই খাটছে! তুমি যাই বল না কেন, এখান থেকে না খেয়ে যাওয়া হবে না।" শেষে আহারাদির পর রাত্রি আন্দাজ আটটায় আটখানি গরুর গাড়িতে সকলে বিষ্ণুপুর অভিমুখে যাত্রা করিলেন।

"জননীং সারদাং দেবীং রামকৃষ্ণং জগদ্‌গুরুম্।
পাদপদ্মে তয়ো শ্রিত্বা প্রণমামি মুহুর্মুহুঃ।।"

Wednesday, 11 May 2016

Quotes by Sarada Devi.....

Quotes by Sarada Devi

As wind removes a cloud, so does the name of God disperse the cloud of worldliness

As you smell the fragrance of a flower by handing it or the smell of sandalwood by rubbing it against a stone, so you obtain spiritual awakening by constantly thinking of God.

One must be patient like the earth. What iniquities are being perpetuated on her! Yet she quietly endures them all.

Each has to get the result of the actions one has earned for this life. A pin at least must prick where a wound from a sword was due.

You see, my son, it is not a fact that you will never face danger. Difficulties always come, but they do not last forever. You will see that they pass away like water under a bridge.

Don’t be afraid. Human birth is full of suffering and one has to endure everything patiently, taking the name of God. None, not even God in human form, can escape the sufferings of body and mind.
I tell you one thing my child — if you want peace, do not find fault with others. Rather, see your own faults. Learn to make the world your own. No one is a stranger, my child; the whole world is your own.
(From Sri Sarada Devi’s last words, spoken before passing away on July 20, 1920)

To err is human. One must not take that into account. It is harmful for oneself. One gets into the habit of finding fault…

To make mistakes is man’s very nature; but few of those who criticize know how to correct them.

It is in the very nature of man to see defects. You should learn to appreciate virtues. Man is no doubt liable to err, but you must not take notice. If you constantly find fault with others, you will see faults alone.’ … `Do not look at the faults of others lest your eyes should become vitiated.’

Do not look for faults in others, or your own eyes will become faulty.

Let me tell you how to love all equally,” said Mother. “Do not demand anything from those you love. If you make demands, some will give you more and some less. In any case you will love more those who give you more and less those who give you less. Thus your love will not be the same for all. You will not be able to love all impartially.

After someone finished her sweeping and threw the broom into a corner, Mother said, “How strange, my dear! The work is finished, and you throw it away carelessly. It takes almost the same time to put it away slowly and carefully as to throw it away. Should you despise a thing just because it is insignificant? ‘Him that you save, saves you in turn.’ Won’t you need it again? Besides, this thing too forms a part of our household. From that point of view also it deserves some consideration. You must give each one his due share of honour. Even a broom must be shown some honor. The smallest work must be done with reverence.

I am the mother of the wicked, as I am the mother of the virtuous. Never fear. Whenever you are in distress, say to yourself, ‘I have a mother.’

I can never refuse anyone who addresses me as Mother.