Friday, 29 April 2016
Quotes from Swamiji
Thursday, 28 April 2016
নাচুক তাহাতে শ্যামা
ফুল্ল ফুল সৌরভে আকুল, মত্ত অলিকুল গুঞ্জরিছে আশে পাশে। শুভ্র শশী যেন হাসিরাশি, যত স্বর্গবাসী বিতরিছে ধরাবাসে ।। মৃদুমন্দ মলয়পবন, যার পরশন, স্মৃতিপট দেয় খুলে। নদী, নদ, সরসী-হিল্লোল, ভ্রমর চঞ্চল, কত বা কমল দোলে ।। ফেনময়ী ঝরে নির্ঝরিণী-তানতরঙ্গিণী-গুহা দেয় প্রতিধ্বনি । স্বরময় পতত্রিনিচয়, লুকায়ে পাতায়, শুনায় সোহাগবাণী ।। চিত্রকর, তরুণ ভাস্কর, স্বর্ণতুলিকর, ছোঁয় মাত্র ধরাপটে। বর্ণখেলা ধরাতল ছায়, রাগপরিচয় ভাবরাশি জেগে ওঠে ।। মেঘমন্দ্র কুলিশ-নিস্বন, মহারণ, ভুলোক-দ্যুলোক-ব্যাপী । অন্ধকার উগরে আঁধার, হুহুঙ্কার শ্বসিছে প্রলয়বায়ু ।। ঝলকি ঝলকি তাহে ভায়, রক্তকায় করাল বিজলীজ্বালা । ফেনময় গর্জি মহাকায়, উর্মি ধায় লঙ্ঘিতে পর্বতচূড়া ।। ঘোষে ভীম গম্ভীর ভূতল, টলমল রসাতল যায় ধরা । পৃথ্বীচ্ছেদি উঠিছে অনল, মহাচল চূর্ণ হয়ে যায় বেগে ।। শোভাময় মন্দির-আলয়, হৃদে নীল পয়, তাহে কুবলয়শ্রেণী । দ্রাক্ষাফল-হৃদয়-রুধির, ফেনশুভ্রশির, বলে মৃদু মৃদু বাণী ।। শ্রুতিপথে বীণার ঝঙ্কার, বাসনা বিস্তার, রাগ তাল মান লয়ে । কতমত ব্রজের উচ্ছ্বাস, গোপী-তপ্তশ্বাস, অশ্রুরাশি পড়ে বয়ে ।। বিম্বফল যুবতী-অধর, ভাবের সাগর—নীলোৎপল দুটি আঁখি । দুটি কর—বাঞ্ছাঅগ্রসর, প্রেমের পিঞ্জর, তাহে বাঁধা প্রাণপাখী ।। ডাকে ভেরী, বাজে ঝর্,র্ ঝর্ঞর্ দামামা নক্কাড়, বীর দাপে কাঁপে ধরা। ঘোষে তোপ বব-বব-বম্, বব-বব-বম্ বন্দুকের কড়কড়া ।। ধুমে ধুমে ভীম রণস্থলে, গরজি অনল বমে শত জ্বালামুখী । ফাটে গোলা লাগে বুকে গায়, কোথা উড়ে যায় আসোয়ার ঘোড়া হাতি ।। পৃথ্বীতল কাঁপে থরথর, লক্ষ অশ্ববরপৃষ্ঠে বীর ঝাঁকে রণে। ভেদি ধূম গোলাবরিষণ গুলি স্বন্ স্বন্, শত্রুতোপ আনে ছিনে ।। আগে যায় বীর্য-পরিচয় পতাকা-নিচয়, দণ্ডে ঝরে রক্তধারা । সঙ্গে সঙ্গে পদাতিকদল, বন্দুক প্রবল, বীরমদে মাতোয়ারা ।। ঐ পড়ে বার ধ্বজাধারী, অন্য বীর তারি ধ্বজা লয়ে আগে চলে। তলে তার ঢের হয়ে যায় মৃত বীরকায়, তবু পিছে নাহি টলে ।। দেহ চায় সুখের সঙ্গম, চিত্ত-বিহঙ্গম সঙ্গীত-সুধার ধার। মন চায় হাসির হিন্দোল, প্রাণ সদা লোল যাইতে দুঃখের পার ।। ছাড়ি হিম শশাঙ্কচ্ছটায়, কেবা বল চায়, মধ্যাহ্নপতন-জ্বালা। প্রাণ যার চণ্ড দিবাকর, স্নিগ্ধ শশধর, সেও তবু লাগে ভালো ।। সুখতরে সবাই কাতর, কেবা সে পামর দুঃখে যার ভালবাসা ? সুখে দুঃখ, অমৃতে গরল, কণ্ঠে হলাহল, তবু নাহি ছাড়ে আশা ।। রুদ্রমুখে সবাই ডরায়, কেহ নাহি চায় মৃত্যুরূপা এলোকেশী । উষ্ণধার, রুধির-উদগার, ভীম তরবার খসাইয়ে দেয় বাঁশী ।। সত্য তুমি মৃত্যরূপা কালী, সুখবনমালী তোমার মায়ার ছায়া। করালিনি, কর মর্মচ্ছেদ, হোক মায়াভেদ, সুখস্বপ্ন দেহে দয়া ।। মুণ্ডমালা পরায়ে তোমায়, ভয়ে ফিরে চায়, নাম দেয় দয়াময়ী। প্রাণ কাঁপে, ভীম অট্টহাস, নগ্ন দিক্াবাস, বলে মা দানবজয়ী ।। মুখে বলে দেখিবে তোমায়, আসিলে সময় কোথা যায় কেবা জানে। মৃত্যু তুমি, রোগ মহামারী বিষকুম্ভ ভরি, বিতরিছ জনে জনে ।। রে উন্মাদ, আপনা ভুলাও, ফিরে নাহি চাও, পাছে দেখ ভয়ঙ্করা। দুখ চাও, সুখ হবে ব'লে, ভক্তিপূজাছলে স্বার্থ-সিদ্ধি মনে ভরা ।। ছাগকণ্ঠ রুধিরের ধার, ভয়ের সঞ্চার, দেখে তোর হিয়া কাঁপে। কাপুরুষ! দয়ার আধার! ধন্য ব্যবহার! মর্মকথা বলি কাকে ? ভাঙ্গ বীণা-প্রেমসুধাপান, মহা আকর্ষণ-দূর কর নারীমায়া । আগুয়ান, সিন্ধুরোলে গান, অশ্রুজলপান, প্রাণপণ, যাক্ কায়া ।। জাগো বীর, ঘুচায়ে স্বপন, শিয়রে শমন, ভয় কি তোমার সাজে? দুঃখভার, এ ভব-ঈশ্বর, মন্দির তাহার প্রেতভূমি চিতামাঝে ।। পূজা তাঁর সংগ্রাম অপার, সদা পরাজয় তাহা না ডরাক তোমা। চূর্ণ হোক স্বার্থ সাধ মান, হৃদয় শ্মশান, নাচুক তাহাতে শ্যামা ।। -
সখার প্রতি
প্রাণ-সাক্ষী শিশুর ক্রন্দন, হেথা সুখ ইচ্ছা মতিমান্?
দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলে অনিবার, পিতা পুত্রে নাহি দেয় স্থান;
'স্বার্থ' স্বার্থ সদা এই রব, হেথা কোথা শান্তির আকার?
সাক্ষাৎ নরক স্বর্গময়—কেবা পারে ছাড়িতে সংসার?
কর্ম-পাশ গলে বাঁধা যার-ক্রীতদাস বল কোথা যায়?
যোগ-ভোগ, গার্হস্থ্য-সন্ন্যাস, জপ-তপ, ধন-উপার্জন,
ব্রত ত্যাগ তপস্যা কঠোর, সব মর্ম দেখেছি এবার;
জেনেছি সুখের নাহি লেশ, শরীরধারণ বিড়ম্বন;
যত উচ্চ তোমার হৃদয়, তত দুঃখ জানিহ নিশ্চয়।
হৃদিবান্ নিঃস্বার্থ প্রেমিক! এ জগতে নাহি তব স্থান;
লৌহপিণ্ড সহে যে আঘাত, মর্মর-মূরিত তা কি সয়?
হও জড়প্রায়, অতি নীচ, মুখে মধু, অন্তরে গরল—
সত্যহীন, স্বার্থপরায়ণ, তবে পাবে এ সংসারে স্থান৷
বিদ্যাহেতু কবি প্রাণপণ, অর্ধেক করেছি আয়ুক্ষয়—
প্রেমহেতু উন্মাদের মতো, প্রাণহীন ধরেছি ছায়ায়;
ধর্ম তরে করি কত মত, গঙ্গাতীর শ্মশানে আলয়,
নদীতীর পর্বতগহ্বর, ভিক্ষাশনে কত কাল যায়।
অসহায়-ছিন্নবাস ধ'রে দ্বারে দ্বারে উদরপূরণ—
ভগ্নদেহ তপস্যার ভারে, কি ধন করিনু উপার্জন?
শোন বলি মরমের কথা, জেনেছি জীবনে সত্য সার—
তরঙ্গ-আকুল ভবঘোর, এক তরী করে পারাপার—
মন্ত্র-তন্ত্র, প্রাণ-নিয়মন, মতামত, দর্শন-বিজ্ঞান,
ত্যাগ-ভোগ-বুদ্ধির বিভ্রম; 'প্রেম' 'প্রেম'-এই মাত্র ধন।
জাব ব্রহ্ম, মানব ঈশ্বর, ভূত-প্রেত-আদি দেবগণ,
পশু-পক্ষী কীট-অনুকীট-এই প্রেম হৃদয়ে সবার ।
'দেব' 'দেব'-বলো আর কেবা? কেবা বলো সবারে চালায়?
পুত্র তরে মায়ে দেয় প্রাণ, দস্যু হরে—প্রেমের প্রেরণ ।।
হয়ে বাক্য-মন-অগোচর, সুখ-দুঃখে তিনি অধিষ্ঠান,
মহাশক্তি কালী মৃত্যুরূপা, মাতৃভাবে তাঁরি আগমন।
রোগ-শোক, দারিদ্র-যাতনা, ধর্মাধর্ম, শুভাশুভ ফল,
সব ভাবে তাঁরি উপাসনা, জীবে বলো কেবা কিবা করে?
ভ্রান্ত সেই যেবা সুখ চায়, দুঃখ চায় উন্মাদ সে জন—
মৃত্যু মাঙ্গে সেও যে পাগল, অমৃতত্ব বৃথা আকিঞ্চন।
যতদূর যতদূর যাও, বুদ্ধিরথে করি আরোহণ,
এই সেই সংসার-জলধি, দুঃখ সুখ করে আবর্তন।
পক্ষহীন শোন বিহঙ্গম, এ যে নহে পথ পালাবার
বারংবার পাইছ আঘাত, কেন কর বৃথায় উদ্যম?
ছাড় বিদ্যা জপ যজ্ঞ বল, স্বার্থহীন প্রেম যে সম্বল;
দেখ, শিক্ষা দেয় পতঙ্গম-অগ্মিশিখা করি আলিঙ্গন।
রূপমুগ্ধ অন্ধ কীটাধম, প্রেমমত্ত তোমার হৃদয়;
হে প্রেমিক, স্বার্থ-মলিনতা অগ্নিকুণ্ডে কর বিসর্জন।
ভিক্ষুকের কবে বলো সুখ? কৃপাপাত্র হয়ে কিবা ফল ?
দাও আর ফিরে চাও, থাকে যদি হৃদয়ে সম্বল।
অনন্তের তুমি অধিকারী প্রেমসিন্ধু হৃদে বিদ্যমান,
'দাও, দাও'-সেবা ফিরে চায়, তার সিন্ধু বিন্দু হয়ে যান।
ব্রহ্ম হ'তে কীট-পরমাণু, সর্বভূতে সেই প্রেমময়,
মন প্রাণ শরীর অর্পণ কর সখে, এ সবার পায়।
বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।।
_____________________________
Sunday, 24 April 2016
বেলঘরিয়া বাসিকে উপদেশ — কেন প্রণাম — কেন ভক্তিযোগ
কীর্তনান্তে সকলেই উপবেশন করিলেন। অনেকেই ঠাকুরকে প্রণাম করিতেছেন। ঠাকুর মাঝে মাঝে বলিতেছেন, “ঈশ্বরকে প্রণাম কর।” আবার বলিতেছেন, “তিনিই সব হয়ে রয়েছেন, তবে এক-এক জায়গায় বেশি প্রকাশ, যেমন সাধুতে। যদি বল, দুষ্ট লোক তো আছে, বাঘ সিংহও আছে; তা বাঘনারায়ণকে আলিঙ্গন করার দরকার নাই, দূর থেকে প্রণাম করে চলে যেতে হয়। আবার দেখ জল, কোন জল খাওয়া যায়, কোন জলে পূজা করা যায়, কোন জলে নাওয়া যায়। আবার কোন জলে কেবল আচান-শোচান হয়।”
প্রতিবেশী — আজ্ঞা, বেদান্তমত কিরূপ?
শ্রীরামকৃষ্ণ — বেদান্তবাদীরা বলে ‘সোঽহম্’ ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা; আমিও মিথ্যা। কেবল সেই পরব্রহ্মই আছেন।
“কিন্তু আমি তো যায় না; তাই আমি তাঁর দাস, আমি তাঁর সন্তান, আমি তাঁর ভক্ত — এ-অভিমান খুব ভাল।
“কলিযুগে ভক্তিযোগই ভাল। ভক্তি দ্বারাও তাঁকে পাওয়া যায়। দেহবুদ্ধি থাকলেই বিষয়বুদ্ধি। রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ — এই সকল বিষয়। বিষয়বুদ্ধি যাওয়া বড় কঠিন। বিষয়বুদ্ধি থাকতে ‘সোঽহম্’ হয় না।
“ত্যাগীদের বিষয়বুদ্ধি কম, সংসারীরা সর্বদাই বিষয়চিন্তা নিয়ে থাকে, তাই সংসারীর পক্ষে ‘দাসোঽহম্’।”
Saturday, 23 April 2016
অমৃতকথা
১৷ নারদীয় ভক্তি বলতে কি বোঝায়?
নারদীয় ভক্তি মানে নিষ্কাম ভক্তি ৷ নারদীয় ভক্তি ও শুদ্ধাভক্তি একই ৷ শুদ্ধাভক্তি ও নিষ্কামভক্তি, এর মধ্যে কোন কামনা নেই ৷ মনে রাখবে ঠাকুর যা বলেছেন --যখন শ্রীরামচন্দ্র নারদকে তাঁর কাছ থেকে বর নিতে বললেন, নারদ তখন বলেছিলেন, 'রাম! আমার আর কি বাকি আছে? কি বর লব? তবে যদি একান্ত বর দিবে, এই বর দাও যেন তোমার পাদপদ্মে শুদ্ধাভক্তি থাকে, আর যেন তোমার ভুবনমোহিনী মায়ায় মুগ্ধ না হই ৷
২৷ 'এক-ভক্তি' বলতে কি বোঝায়?
'এক-ভক্তি' মানে একের প্রতি ভক্তি, মনটা একমুখী ৷ যার একমাত্র ভগবানের দিকেই মন থাকে সে অসাধারণ ব্যক্তি ৷সাধারণ মানুষের মন নানাদিকে যায়, একবার ভগবানে গেলে দশবার বিষয় চিন্তায় যায, ভগবানের চিন্তা দৃঢ় করতে দেয় না ৷
Friday, 22 April 2016
শ্রীশ্রীমা সারদা দেবী ও ভগিনী নিবেদিতা
শ্রীশ্রীমা একবার জয়রামবাটি থেকে দক্ষিণেশ্বরে যাবার পথে ডাকাতের হাতে পড়েছিলেন। এ ঘটনার বিবরণ যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি কৌতূহলোদ্দীপক।
একবার কোন এক উৎসব উপলক্ষ্যে কয়েকজন যাত্রী গঙ্গাস্নান করার উদ্দেশ্যে কামারপুকুর থেকে কলকাতার পথে যাত্রা করেন। শ্রীমাও তাঁর ভাসুরপো ( শিবরাম ) এবং ভাসুরজীকে ( লক্ষীমণিদেবী ) সঙ্গে নিয়ে তাদের সঙ্গী হন। শ্রীমার উদ্দেশ্য ছিলে কলকাতায় গিয়ে তিনি দক্ষিণেশ্বরে যাবেন এবং সেখানেই থেকে যাবেন। তখন পায়ে হেঁটেই সকলে যেত। কামারপুকুর থেকে যাত্রা করে আট মাইল দূরে আরামবাগে তারা দুপুরের মধ্যেই পৌঁছে যান। এর পরেই বিখ্যাত তেলোভেলোর মাঠ। জায়গাটি ডাকাতদের আড্ডা বলে কুখ্যাত। এ পথে সকলে দল বেঁধে যেতেই চেষ্টা করত। আরামবাগে পৌঁছে যেহেতু হাতে অনেক সময় ছিল, তাই সকলে স্থির করেন তারা তখনই রওনা হয়ে দিনের আলো থাকতেই তেলোভেলোর মাঠটি ছাড়িয়ে যাবেন। শ্রীমা নিজের অসুবিধা হবে জেনেও সকলের চলার পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাইলেন না। এগিয়ে যাওয়াই ঠিক হল। শ্রীমা কিছুক্ষণ পরেই পিছিয়ে পড়তে শুরু করেন এবং সঙ্গীদের দেরী হয়ে যাবে বলে মা তাদের এগিয়ে যেতে বলেন। তারা দ্রুতপায়ে চলে মাকে ফেলে চলে যান। শ্রীমা একা চলতে থাকেন। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। কিছু পরে কোঁকড়া চুল ও কালো চেহারার একজন লম্বা লোক লাঠি কাঁধে করে শ্রীমার সামনে এসে হাজির হয় এবং কর্কশ গলায় মা কোথায় যাচ্ছেন জানতে চায়। কিন্তু হঠাৎ লোকটা হাঁ করে মার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং খুব নরম সুরে বলে, "ভয় নেই। আমার সঙ্গে একজন মহিলা আছে। সে পিছিয়ে পড়েছে। এখনই চলে আসবে।" মহিলাটি এলে মা বললেন, "আমি তোমাদের মেয়ে। তোমাদের জামাই দক্ষিণেশ্বরে থাকে। তোমরা আমাকে তার কাছে পৌঁছে দেও।" সেই সরল প্রাণের একান্ত নির্ভরতা দস্যুদম্পতির মন ছুঁয়ে গেল। তারা শ্রীমাকে সে রাতের মত তাদের আশ্রয়ে নিয়ে রাখে এবং পরদিন সকালে বাগদিনী তার স্বামীকে বাজারে গিয়ে মাছ ও সব্জী আনতে বলে। রান্না করে মাকে খাইয়ে তারা যখন তৈরী তখন শ্রীমায়ের সঙ্গীরা মাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে এসে হাজির হন। সেই ডাকাতবাবা ও ডাকাত মা শ্রীমার সঙ্গে তারকেশ্বরের পথে অনেক দূর অবধি যায় এবং মাঠ থেকে কড়াইশুঁটি তুলে বাগদিনী কাতর গলায় বলে, "মা সারদা, রাত্রে যখন মুড়ি খাবি তখন এগুলো দিয়ে খাস।"
পরে শ্রীমাকে অনেকে সেই রাত্রে ডাকাতের হঠাৎ মনের পরিবর্তন সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছিলেন। শ্রীআশুতোষ মিত্র প্রণীত 'শ্রীমা' গ্রন্থে ডাকাতের ঘটনা এইভাবে লেখা হয়েছে - শ্রীমা বলিতেছেন, "লোকটা জাতে বাগদী, ডাকাতের মতো রুক্ষ গলায় জিজ্ঞাসা করলে,'তুই কে ?' আর আমার পানে হাঁ করে তাকিয়ে রইল।" যাঁহার সহিত শ্রীমায়ের কথা হইতেছিল, সেই ভক্ত মায়ের কথা শুনিয়া জানিতে চাহিলেন, "ডাকাত আপনার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে কি দেখছিল ?" শ্রীমা -" পরে বলেছিল, কালীরূপে না কি দেখেছিল।" ভক্ত - "তাহলে আপনি কালীরূপে তাকে দেখা দিয়েছিলেন ? লুকোবেন না, মা, বলুন।" শ্রীমা - "আমি কেন দেখাতে যাব। সে বললে, সে দেখেছে।" ভক্ত - "তা হলেই হল - আপনি দেখিয়েছিলেন।" শ্রীমা (সহাস্যে) - "তা তুমি যাই বল না কেন ?"
Swami Vivekananda's quotes on Ramakrsihna
All that I am, all that the world itself will some day be, is owing to my Master, Shri Ramakrishna, who incarnated and experienced and taught this wonderful unity which underlies everything, having discovered it alike in Hinduism, in Islam, and in Christianity.
If I have told you one word for truth, it was his (Ramakrishna's) and his alone, and if I have told you many things which were not true, which were not correct, which were not beneficial to the human race, they were all mine, and on me is the responsibility.
In order that a nation may rise, it must have a high ideal. Now, that ideal is, of course, the abstract Brahman. But as you all cannot be inspired by an abstract ideal, you must have a personal ideal. You have got that, in the person of Shri Ramakrishna. The reason why other personages cannot be our ideal now is, that their days are gone; and in order that Vedanta may come to everyone, there must be a person who is in sympathy with the present generation. This is fulfilled in Shri Ramakrishna. So now youIf I have told you one word for truth, it was his (Ramakrishna's) and his alone, and if I have told you many things which were not true, which were not correct, which were not beneficial to the human race, they were all mine, and on me is the responsibility.
In order that a nation may rise, it must have a high ideal. Now, that ideal is, of course, the abstract Brahman. But as you all cannot be inspired by an abstract ideal, you must have a personal ideal. You have got that, in the person of Shri Ramakrishna. The reason why other personages cannot be our ideal now is, that their days are gone; and in order that Vedanta may come to everyone, there must be a person who is in sympathy with the present generation. This is fulfilled in Shri Ramakrishna. So now you should place him before everyone. Whether one accepts him as a Sadhu or an Avatara does not matter. should place him before everyone. Whether one accepts him as a Sadhu or an Avatara does not matter.
Thursday, 21 April 2016
আমাদের জাতীয় জীবন অতীতকালে মহৎ ছিল ,তাহাতে সন্দেহ নাই , কিন্তু আমি অকপটভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের ভবিষ্যত আরও গৌরবান্বিত।
অনন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাং যে জনাঃ পর্যুপাসতে।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্।।
“আমি সত্যিকারের মা; গুরুপত্নী নয়, পাতানো মা নয়, কথার কথা মা নয় – সত্য জননী।”
অন্তরঙ্গ সঙ্গে – ‘আমি কে’? ত্বমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং, ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্ ৷ ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা, সনাতনস্ত্বং, পুরুষো মতো মে ৷ [গীতা -- ১১।১৮]
ভক্তির উপায় – শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত
মাতৃকথা - অমৃত সমান
Wednesday, 20 April 2016
স্বামীজীৰ বাণী
Swamiji's Quotation (2)
পরমার্থ প্রসঙ্গ
সংসার অসার, অনিত্য, তিনি একমাত্র সার সত্য, এই ভাবটি যতদিন মনে দৃঢ় না হয়়, ততদিন ধ্যান করবার সময় মন চঞ্চল হবেই |
ইন্দ্রিয়সুখে যত বিতৃষ্ণা আসবে, ভগবানে অনুরাগ তত বাড়বে, মনও তত একাগ্র হবে |
তাঁর প্রেমের স্বাদ কণিকামাত্রও পেলে জগতের সমস্ত সুখ তুচ্ছ, ঘৃণ্য হয়ে যাবে |
Joy thakur
Tuesday, 19 April 2016
পরমার্থ - প্রসঙ্গ
যথার্থ ভক্তের ভাব, সাধকের ভাব হচ্ছে -- আমি জপধ্যান করে আনন্দ পাই, না করে থাকতে পারি না, তাই করি; প্রাণ জুড়োবার আর যে অন্য উপায় নেই, তাই করি; জপধ্যান যে আমার নিশ্বাস -প্রশ্বাসের মতো,না নিলে যে প্রাণে বাঁচি না, তাই করি | তিনি যে আমার প্রাণের প্রাণ, আত্মার আত্মা | তাঁকে পেতেই হবে,যেরকম করেই হোক | না পেলে যে পাগল হয়ে যাব, প্রাণ যাবে, এ জীবনই বৃথা হবে | এরকম ব্যাকুলতা, এরকম রোক হলে তিনি কৃপা করবেনই | তিনি যে দয়াময় | তাঁকে মন:প্রাণ এক করে ডাকলে, তাঁর জন্যে সর্বস্ব ত্যাগ করলে, অনন্যশরণ হলে তিনি দেখা দেবেনই দেবেন |
অমৃত কথা
শ্রীরামকৃষ্ণ - কেউ কেউ জ্ঞানচর্চা করে বলে মনে করে, আমি কি হইছি। হয়তো একটু বেদান্ত পড়েছে। কিন্তু ঠিক জ্ঞান হলে অহংকার হয় না, অর্থাৎ যদি সমাধি হয়, আর মানুষ তাঁর সঙ্গে এক হয়ে যায়, তাহলে আর অহংকার থাকে না। সমাধি না হলে ঠিক জ্ঞান হয় না। সমাধি হলে তাঁর সঙ্গে এক হওয়া যায়। আর অহং থাকে না। কিরকম জানো? ঠিক দুপুর বেলা সূর্য ঠিক মাথার উপর উঠে। তখন মানুষটা চারিদিকে চেয়ে দেখে, আর ছায়া নাই। ঠিক জ্ঞান হলে - সমাধিস্থ হলে - অহংরূপ ছায়া থাকে না। ঠিক জ্ঞান হবার পর যদি অহং থাকে, তবে জেনো, ‘বিদ্যার আমি’ ‘ভক্তের আমি’ ‘দাস আমি’। সে ‘অবিদ্যার আমি’ নয়। আবার জ্ঞান ভক্তি দুইটিই পথ - যে পথ দিয়ে যাও, তাঁকেই পাবে। জ্ঞানী একভাবে তাঁকে দেখে, ভক্ত আর-একভাবে তাঁকে দেখে। জ্ঞানীর ঈশ্বর তেজোময়, ভক্তের রসময়।“
Monday, 18 April 2016
ধর্ম প্রসঙ্গে -স্বামী ব্রহ্মানন্দ
ইন্দ্রিয়ের কর্তা মনকে দমন করতে হবে | আবার মন বুদ্ধি উভয়কেই আত্মাতে লয় করতে হবে | মনকে একদম মেরে না ফেললে চলবে না | সাধুসঙ্গে ইন্দ্রিয়গুলি চুপ মেরে আছে, মনে করো না ও-গুলি আর নেই | সমাধি না হলে ওসব যায় না | একটু ছেড়ে দাও, দেখবে দ্বিগুন জোরে ইন্দ্রিয়গুলি ছোবল মারবে | সেইজন্য খুব সাবধানে থাকা প্রয়োজন, যতক্ষণ না মন-বুদ্ধির পারে যাচ্ছে |
কথামৃত
মানুষ নিজের মুক্তির চেষ্টায় জগৎপ্রপঞ্চের সম্বন্ধ একেবারে ত্যাগ করিতে চায়, মানুষ নিজ আত্মীয়-স্বজন স্ত্রী-পুত্র বন্ধু-বান্ধবের মায়া কাটাইয়া সংসার হইতে দূরে – অতি দূরে পলাইয়া যায় ; চেষ্টা করে দেহগত সকল সম্বন্ধ-পুরাতন সকল সংস্কার ত্যাগ করিতে, এমন কি সে নিজে যে সার্ধ –ত্রিহস্ত-পরিমিত দেহধারী মানুষ, ইহাও ভুলিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে ; কিন্তু তাহার অন্তরের অন্তরে সর্বদাই সে একটি মৃদু অস্ফুট ধ্বনি শুনিতে পায়, তাহার কর্ণে একটি সুর সর্বদা বাজিতে থাকে, কে যেন দিবারাত্র তাহার কানে কানে মৃদু স্বরে বলিতে থাকে , ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’ । --স্বামীজী