Friday, 29 April 2016

Quotes from Swamiji


Every thought that we think, every deed that we do,after a certain time becomes fine, goes into seed form, so to speak, and lives in the fine body in a potential form,and after a time,it emerges again and bears its results. These results condition the life of man. Thus he moulds his own life. Man is not bound by any other laws excepting those which he makes for himself. 

Thursday, 28 April 2016

নাচুক তাহাতে শ্যামা


 ফুল্ল ফুল সৌরভে আকুল, মত্ত অলিকুল গুঞ্জরিছে আশে পাশে। শুভ্র শশী যেন হাসিরাশি, যত স্বর্গবাসী বিতরিছে ধরাবাসে ।। মৃদুমন্দ মলয়পবন, যার পরশন, স্মৃতিপট দেয় খুলে। নদী, নদ, সরসী-হিল্লোল, ভ্রমর চঞ্চল, কত বা কমল দোলে ।। ফেনময়ী ঝরে নির্ঝরিণী-তানতরঙ্গিণী-গুহা দেয় প্রতিধ্বনি । স্বরময় পতত্রিনিচয়, লুকায়ে পাতায়, শুনায় সোহাগবাণী ।। চিত্রকর, তরুণ ভাস্কর, স্বর্ণতুলিকর, ছোঁয় মাত্র ধরাপটে। বর্ণখেলা ধরাতল ছায়, রাগপরিচয় ভাবরাশি জেগে ওঠে ।। মেঘমন্দ্র কুলিশ-নিস্বন, মহারণ, ভুলোক-দ্যুলোক-ব্যাপী । অন্ধকার উগরে আঁধার, হুহুঙ্কার শ্বসিছে প্রলয়বায়ু ।। ঝলকি ঝলকি তাহে ভায়, রক্তকায় করাল বিজলীজ্বালা । ফেনময় গর্জি মহাকায়, উর্মি ধায় লঙ্ঘিতে পর্বতচূড়া ।। ঘোষে ভীম গম্ভীর ভূতল, টলমল রসাতল যায় ধরা । পৃথ্বীচ্ছেদি উঠিছে অনল, মহাচল চূর্ণ হয়ে যায় বেগে ।। শোভাময় মন্দির-আলয়, হৃদে নীল পয়, তাহে কুবলয়শ্রেণী । দ্রাক্ষাফল-হৃদয়-রুধির, ফেনশুভ্রশির, বলে মৃদু মৃদু বাণী ।। শ্রুতিপথে বীণার ঝঙ্কার, বাসনা বিস্তার, রাগ তাল মান লয়ে । কতমত ব্রজের উচ্ছ্বাস, গোপী-তপ্তশ্বাস, অশ্রুরাশি পড়ে বয়ে ।। বিম্বফল যুবতী-অধর, ভাবের সাগর—নীলোৎপল দুটি আঁখি । দুটি কর—বাঞ্ছাঅগ্রসর, প্রেমের পিঞ্জর, তাহে বাঁধা প্রাণপাখী ।। ডাকে ভেরী, বাজে ঝর্,‍র্ ঝর্ঞ‍র্ দামামা নক্কাড়, বীর দাপে কাঁপে ধরা। ঘোষে তোপ বব-বব-বম্, বব-বব-বম্ বন্দুকের কড়কড়া ।। ধুমে ধুমে ভীম রণস্থলে, গরজি অনল বমে শত জ্বালামুখী । ফাটে গোলা লাগে বুকে গায়, কোথা উড়ে যায় আসোয়ার ঘোড়া হাতি ।। পৃথ্বীতল কাঁপে থরথর, লক্ষ অশ্ববরপৃষ্ঠে বীর ঝাঁকে রণে। ভেদি ধূম গোলাবরিষণ গুলি স্বন্ স্বন্, শত্রুতোপ আনে ছিনে ।। আগে যায় বীর্য-পরিচয় পতাকা-নিচয়, দণ্ডে ঝরে রক্তধারা । সঙ্গে সঙ্গে পদাতিকদল, বন্দুক প্রবল, বীরমদে মাতোয়ারা ।। ঐ পড়ে বার ধ্বজাধারী, অন্য বীর তারি ধ্বজা লয়ে আগে চলে। তলে তার ঢের হয়ে যায় মৃত বীরকায়, তবু পিছে নাহি টলে ।। দেহ চায় সুখের সঙ্গম, চিত্ত-বিহঙ্গম সঙ্গীত-সুধার ধার। মন চায় হাসির হিন্দোল, প্রাণ সদা লোল যাইতে দুঃখের পার ।। ছাড়ি হিম শশাঙ্কচ্ছটায়, কেবা বল চায়, মধ্যাহ্নপতন-জ্বালা। প্রাণ যার চণ্ড দিবাকর, স্নিগ্ধ শশধর, সেও তবু লাগে ভালো ।। সুখতরে সবাই কাতর, কেবা সে পামর দুঃখে যার ভালবাসা ? সুখে দুঃখ, অমৃতে গরল, কণ্ঠে হলাহল, তবু নাহি ছাড়ে আশা ।। রুদ্রমুখে সবাই ডরায়, কেহ নাহি চায় মৃত্যুরূপা এলোকেশী । উষ্ণধার, রুধির-উদগার, ভীম তরবার খসাইয়ে দেয় বাঁশী ।। সত্য তুমি মৃত্যরূপা কালী, সুখবনমালী তোমার মায়ার ছায়া। করালিনি, কর মর্মচ্ছেদ, হোক মায়াভেদ, সুখস্বপ্ন দেহে দয়া ।। মুণ্ডমালা পরায়ে তোমায়, ভয়ে ফিরে চায়, নাম দেয় দয়াময়ী। প্রাণ কাঁপে, ভীম অট্টহাস, নগ্ন দিক্া‍বাস, বলে মা দানবজয়ী ।। মুখে বলে দেখিবে তোমায়, আসিলে সময় কোথা যায় কেবা জানে। মৃত্যু তুমি, রোগ মহামারী বিষকুম্ভ ভরি, বিতরিছ জনে জনে ।। রে উন্মাদ, আপনা ভুলাও, ফিরে নাহি চাও, পাছে দেখ ভয়ঙ্করা। দুখ চাও, সুখ হবে ব'লে, ভক্তিপূজাছলে স্বার্থ-সিদ্ধি মনে ভরা ।। ছাগকণ্ঠ রুধিরের ধার, ভয়ের সঞ্চার, দেখে তোর হিয়া কাঁপে। কাপুরুষ! দয়ার আধার! ধন্য ব্যবহার! মর্মকথা বলি কাকে ? ভাঙ্গ বীণা-প্রেমসুধাপান, মহা আকর্ষণ-দূর কর নারীমায়া । আগুয়ান, সিন্ধুরোলে গান, অশ্রুজলপান, প্রাণপণ, যাক্ কায়া ।। জাগো বীর, ঘুচায়ে স্বপন, শিয়রে শমন, ভয় কি তোমার সাজে? দুঃখভার, এ ভব-ঈশ্বর, মন্দির তাহার প্রেতভূমি চিতামাঝে ।। পূজা তাঁর সংগ্রাম অপার, সদা পরাজয় তাহা না ডরাক তোমা। চূর্ণ হোক স্বার্থ সাধ মান, হৃদয় শ্মশান, নাচুক তাহাতে শ্যামা ।। - 

সখার প্রতি

আঁধারে আলোক-অনুভব, দুঃখে সুখ, রোগে স্বাস্থ্যবান;
প্রাণ-সাক্ষী শিশুর ক্রন্দন, হেথা সুখ ইচ্ছা মতিমান্?
দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলে অনিবার, পিতা পুত্রে নাহি দেয় স্থান;
'স্বার্থ' স্বার্থ সদা এই রব, হেথা কোথা শান্তির আকার?
সাক্ষাৎ নরক স্বর্গময়—কেবা পারে ছাড়িতে সংসার?
কর্ম-পাশ গলে বাঁধা যার-ক্রীতদাস বল কোথা যায়?
যোগ-ভোগ, গার্হস্থ্য-সন্ন্যাস, জপ-তপ, ধন-উপার্জন,
ব্রত ত্যাগ তপস্যা কঠোর, সব মর্ম দেখেছি এবার;
জেনেছি সুখের নাহি লেশ, শরীরধারণ বিড়ম্বন;
যত উচ্চ তোমার হৃদয়, তত দুঃখ জানিহ নিশ্চয়।
হৃদিবান্ নিঃস্বার্থ প্রেমিক! এ জগতে নাহি তব স্থান;
লৌহপিণ্ড সহে যে আঘাত, মর্মর-মূরিত তা কি সয়?
হও জড়প্রায়, অতি নীচ, মুখে মধু, অন্তরে গরল—
সত্যহীন, স্বার্থপরায়ণ, তবে পাবে এ সংসারে স্থান৷
বিদ্যাহেতু কবি প্রাণপণ, অর্ধেক করেছি আয়ুক্ষয়—
প্রেমহেতু উন্মাদের মতো, প্রাণহীন ধরেছি ছায়ায়;
ধর্ম তরে করি কত মত, গঙ্গাতীর শ্মশানে আলয়,
নদীতীর পর্বতগহ্বর, ভিক্ষাশনে কত কাল যায়।
অসহায়-ছিন্নবাস ধ'রে দ্বারে দ্বারে উদরপূরণ—
ভগ্নদেহ তপস্যার ভারে, কি ধন করিনু উপার্জন?
শোন বলি মরমের কথা, জেনেছি জীবনে সত্য সার—
তরঙ্গ-আকুল ভবঘোর, এক তরী করে পারাপার—
মন্ত্র-তন্ত্র, প্রাণ-নিয়মন, মতামত, দর্শন-বিজ্ঞান,
ত্যাগ-ভোগ-বুদ্ধির বিভ্রম; 'প্রেম' 'প্রেম'-এই মাত্র ধন।
জাব ব্রহ্ম, মানব ঈশ্বর, ভূত-প্রেত-আদি দেবগণ,
পশু-পক্ষী কীট-অনুকীট-এই প্রেম হৃদয়ে সবার ।
'দেব' 'দেব'-বলো আর কেবা? কেবা বলো সবারে চালায়? 
পুত্র তরে মায়ে দেয় প্রাণ, দস্যু হরে—প্রেমের প্রেরণ ।।
হয়ে বাক্য-মন-অগোচর, সুখ-দুঃখে তিনি অধিষ্ঠান,
মহাশক্তি কালী মৃত্যুরূপা, মাতৃভাবে তাঁরি আগমন।
রোগ-শোক, দারিদ্র-যাতনা, ধর্মাধর্ম, শুভাশুভ ফল,
সব ভাবে তাঁরি উপাসনা, জীবে বলো কেবা কিবা করে?
ভ্রান্ত সেই যেবা সুখ চায়, দুঃখ চায় উন্মাদ সে জন—
মৃত্যু মাঙ্গে সেও যে পাগল, অমৃতত্ব বৃথা আকিঞ্চন।
যতদূর যতদূর যাও, বুদ্ধিরথে করি আরোহণ,
এই সেই সংসার-জলধি, দুঃখ সুখ করে আবর্তন।
পক্ষহীন শোন বিহঙ্গম, এ যে নহে পথ পালাবার
বারংবার পাইছ আঘাত, কেন কর বৃথায় উদ্যম?
ছাড় বিদ্যা জপ যজ্ঞ বল, স্বার্থহীন প্রেম যে সম্বল;
দেখ, শিক্ষা দেয় পতঙ্গম-অগ্মিশিখা করি আলিঙ্গন।
রূপমুগ্ধ অন্ধ কীটাধম, প্রেমমত্ত তোমার হৃদয়;
হে প্রেমিক, স্বার্থ-মলিনতা অগ্নিকুণ্ডে কর বিসর্জন।
ভিক্ষুকের কবে বলো সুখ? কৃপাপাত্র হয়ে কিবা ফল ?
দাও আর ফিরে চাও, থাকে যদি হৃদয়ে সম্বল।
অনন্তের তুমি অধিকারী প্রেমসিন্ধু হৃদে বিদ্যমান,
'দাও, দাও'-সেবা ফিরে চায়, তার সিন্ধু বিন্দু হয়ে যান।
ব্রহ্ম হ'তে কীট-পরমাণু, সর্বভূতে সেই প্রেমময়,
মন প্রাণ শরীর অর্পণ কর সখে, এ সবার পায়।
বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।।

_____________________________

Sunday, 24 April 2016

বেলঘরিয়া বাসিকে উপদেশ — কেন প্রণাম — কেন ভক্তিযোগ




কীর্তনান্তে সকলেই উপবেশন করিলেন। অনেকেই ঠাকুরকে প্রণাম করিতেছেন। ঠাকুর মাঝে মাঝে বলিতেছেন, “ঈশ্বরকে প্রণাম কর।” আবার বলিতেছেন, “তিনিই সব হয়ে রয়েছেন, তবে এক-এক জায়গায় বেশি প্রকাশ, যেমন সাধুতে। যদি বল, দুষ্ট লোক তো আছে, বাঘ সিংহও আছে; তা বাঘনারায়ণকে আলিঙ্গন করার দরকার নাই, দূর থেকে প্রণাম করে চলে যেতে হয়। আবার দেখ জল, কোন জল খাওয়া যায়, কোন জলে পূজা করা যায়, কোন জলে নাওয়া যায়। আবার কোন জলে কেবল আচান-শোচান হয়।”

প্রতিবেশী — আজ্ঞা, বেদান্তমত কিরূপ?

শ্রীরামকৃষ্ণ — বেদান্তবাদীরা বলে ‘সোঽহম্‌’ ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা; আমিও মিথ্যা। কেবল সেই পরব্রহ্মই আছেন।

“কিন্তু আমি তো যায় না; তাই আমি তাঁর দাস, আমি তাঁর সন্তান, আমি তাঁর ভক্ত — এ-অভিমান খুব ভাল।

“কলিযুগে ভক্তিযোগই ভাল। ভক্তি দ্বারাও তাঁকে পাওয়া যায়। দেহবুদ্ধি থাকলেই বিষয়বুদ্ধি। রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ — এই সকল বিষয়। বিষয়বুদ্ধি যাওয়া বড় কঠিন। বিষয়বুদ্ধি থাকতে ‘সোঽহম্‌’ হয় না।

“ত্যাগীদের বিষয়বুদ্ধি কম, সংসারীরা সর্বদাই বিষয়চিন্তা নিয়ে থাকে, তাই সংসারীর পক্ষে ‘দাসোঽহম্‌’।”

Saturday, 23 April 2016

অমৃতকথা


১৷ নারদীয় ভক্তি বলতে কি বোঝায়?

নারদীয় ভক্তি মানে নিষ্কাম ভক্তি ৷ নারদীয় ভক্তি ও শুদ্ধাভক্তি একই ৷ শুদ্ধাভক্তি ও নিষ্কামভক্তি, এর মধ্যে কোন কামনা নেই  ৷ মনে রাখবে ঠাকুর যা বলেছেন --যখন শ্রীরামচন্দ্র নারদকে তাঁর কাছ থেকে বর নিতে বললেন,  নারদ তখন বলেছিলেন, 'রাম! আমার আর কি বাকি আছে? কি বর লব? তবে যদি একান্ত বর দিবে,  এই বর দাও যেন তোমার পাদপদ্মে শুদ্ধাভক্তি থাকে,  আর যেন তোমার ভুবনমোহিনী মায়ায় মুগ্ধ না হই  ৷

২৷ 'এক-ভক্তি' বলতে কি বোঝায়? 

'এক-ভক্তি' মানে একের প্রতি ভক্তি, মনটা একমুখী ৷ যার একমাত্র ভগবানের দিকেই মন থাকে সে অসাধারণ ব্যক্তি ৷সাধারণ মানুষের মন নানাদিকে যায়, একবার ভগবানে গেলে দশবার বিষয় চিন্তায় যায, ভগবানের চিন্তা দৃঢ় করতে দেয় না ৷

Friday, 22 April 2016

শ্রীশ্রীমা সারদা দেবী ও ভগিনী নিবেদিতা

গ্রামের মেয়ে সারদা, এক বর্ণ ইংরেজি জানেন না। কিন্তু চমৎকার আলাপচারিতা চালিয়ে যান সারা বুল, মিস ম্যাকলয়েড বা সিস্টার নিবেদিতার সঙ্গে। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে, কিন্তু আহার করেন এঁদের সকলের সঙ্গে। সিস্টার নিবেদিতা বলেন, মা, তুমি আমাদের কালী। মা বলেন, না না, তবে তো আমাকে জিভ বার করে রাখতে হবে। নিবেদিতা বলেন, তার কোনও দরকার নেই। তবু তুমি আমাদের কালী, আর ঠাকুর হলেন স্বয়ং শিব। মা মেনে নেন। নিজ হাতে রঙিন উলের ঝালর দেওয়া হাতপাখা বানিয়ে দেন নিবেদিতাকে। নিবেদিতার সে কী আনন্দ এমন উপহার পেয়ে, সকলের মাথায় হাতপাখা ছোঁয়াতে থাকেন। মা বলেন, মেয়েটা বড় সরল। আর বিবেকানন্দের প্রতি আনুগত্য দেখবার মতো। নিজের দেশ ছেড়ে এসেছে গুরুর দেশের কাজে লাগবে বলে। নিবেদিতার ভারতপ্রেম অতুলনীয়।

শ্রীশ্রীমা একবার জয়রামবাটি থেকে দক্ষিণেশ্বরে যাবার পথে ডাকাতের হাতে পড়েছিলেন। এ ঘটনার বিবরণ যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি কৌতূহলোদ্দীপক।


একবার কোন এক উৎসব উপলক্ষ্যে কয়েকজন যাত্রী গঙ্গাস্নান করার উদ্দেশ্যে কামারপুকুর থেকে কলকাতার পথে যাত্রা করেন। শ্রীমাও তাঁর ভাসুরপো ( শিবরাম ) এবং ভাসুরজীকে ( লক্ষীমণিদেবী ) সঙ্গে নিয়ে তাদের সঙ্গী হন। শ্রীমার উদ্দেশ্য ছিলে কলকাতায় গিয়ে তিনি দক্ষিণেশ্বরে যাবেন এবং সেখানেই থেকে যাবেন। তখন পায়ে হেঁটেই সকলে যেত। কামারপুকুর থেকে যাত্রা করে আট মাইল দূরে আরামবাগে তারা দুপুরের মধ্যেই পৌঁছে যান। এর পরেই বিখ্যাত তেলোভেলোর মাঠ। জায়গাটি ডাকাতদের আড্ডা বলে কুখ্যাত। এ পথে সকলে দল বেঁধে যেতেই চেষ্টা করত। আরামবাগে পৌঁছে যেহেতু হাতে অনেক সময় ছিল, তাই সকলে স্থির করেন তারা তখনই রওনা হয়ে দিনের আলো থাকতেই তেলোভেলোর মাঠটি ছাড়িয়ে যাবেন। শ্রীমা নিজের অসুবিধা হবে জেনেও সকলের চলার পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাইলেন না। এগিয়ে যাওয়াই ঠিক হল। শ্রীমা কিছুক্ষণ পরেই পিছিয়ে পড়তে শুরু করেন এবং সঙ্গীদের দেরী হয়ে যাবে বলে মা তাদের এগিয়ে যেতে বলেন। তারা দ্রুতপায়ে চলে মাকে ফেলে চলে যান। শ্রীমা একা চলতে থাকেন। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। কিছু পরে কোঁকড়া চুল ও কালো চেহারার একজন লম্বা লোক লাঠি কাঁধে করে শ্রীমার সামনে এসে হাজির হয় এবং কর্কশ গলায় মা কোথায় যাচ্ছেন জানতে চায়। কিন্তু হঠাৎ লোকটা হাঁ করে মার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং খুব নরম সুরে বলে, "ভয় নেই। আমার সঙ্গে একজন মহিলা আছে। সে পিছিয়ে পড়েছে। এখনই চলে আসবে।" মহিলাটি এলে মা বললেন, "আমি তোমাদের মেয়ে। তোমাদের জামাই দক্ষিণেশ্বরে থাকে। তোমরা আমাকে তার কাছে পৌঁছে দেও।" সেই সরল প্রাণের একান্ত নির্ভরতা দস্যুদম্পতির মন ছুঁয়ে গেল। তারা শ্রীমাকে সে রাতের মত তাদের আশ্রয়ে নিয়ে রাখে এবং পরদিন সকালে বাগদিনী তার স্বামীকে বাজারে গিয়ে মাছ ও সব্জী আনতে বলে। রান্না করে মাকে খাইয়ে তারা যখন তৈরী তখন শ্রীমায়ের সঙ্গীরা মাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে এসে হাজির হন। সেই ডাকাতবাবা ও ডাকাত মা শ্রীমার সঙ্গে তারকেশ্বরের পথে অনেক দূর অবধি যায় এবং মাঠ থেকে কড়াইশুঁটি তুলে বাগদিনী কাতর গলায় বলে, "মা সারদা, রাত্রে যখন মুড়ি খাবি তখন এগুলো দিয়ে খাস।"
পরে শ্রীমাকে অনেকে সেই রাত্রে ডাকাতের হঠাৎ মনের পরিবর্তন সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছিলেন। শ্রীআশুতোষ মিত্র প্রণীত 'শ্রীমা' গ্রন্থে ডাকাতের ঘটনা এইভাবে লেখা হয়েছে - শ্রীমা বলিতেছেন, "লোকটা জাতে বাগদী, ডাকাতের মতো রুক্ষ গলায় জিজ্ঞাসা করলে,'তুই কে ?' আর আমার পানে হাঁ করে তাকিয়ে রইল।" যাঁহার সহিত শ্রীমায়ের কথা হইতেছিল, সেই ভক্ত মায়ের কথা শুনিয়া জানিতে চাহিলেন, "ডাকাত আপনার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে কি দেখছিল ?" শ্রীমা -" পরে বলেছিল, কালীরূপে না কি দেখেছিল।" ভক্ত - "তাহলে আপনি কালীরূপে তাকে দেখা দিয়েছিলেন ? লুকোবেন না, মা, বলুন।" শ্রীমা - "আমি কেন দেখাতে যাব। সে বললে, সে দেখেছে।" ভক্ত - "তা হলেই হল - আপনি দেখিয়েছিলেন।" শ্রীমা (সহাস্যে) - "তা তুমি যাই বল না কেন ?"
এই ডাকাতের নাম সাগর সাঁতরা এবং তার স্ত্রী মাতঙ্গিনী। এই ঘটনার পরে সাগর আর কখনও ডাকাতি করে নি। পরে তারা কয়েকবারই দক্ষিণেশ্বরে গিয়েছে এবং ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের আশীর্বাদ লাভ করে ধন্য হয়েছে। তাদের দুই ছেলে বিহারী ও মেহারী শ্রীমায়ের কাছে মন্ত্রদীক্ষা লাভ করে। ১৯১০ সালের এপ্রিল মাসে সাগর সাঁতরা বেল গাছ থেক্লে পড়ে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মারা যায়। তেলুয়া ও ভালিয়া ( সংক্ষেপে তেলো ও ভেলো ) দুটি পাশাপাশি গ্রাম। দুই গ্রামের মধ্যবর্তী মাঠই তেলোভেলোর মাঠ।

Swami Vivekananda's quotes on Ramakrsihna


All that I am, all that the world itself will some day be, is owing to my Master, Shri Ramakrishna, who incarnated and experienced and taught this wonderful unity which underlies everything, having discovered it alike in Hinduism, in Islam, and in Christianity.


If I have told you one word for truth, it was his (Ramakrishna's) and his alone, and if I have told you many things which were not true, which were not correct, which were not beneficial to the human race, they were all mine, and on me is the responsibility.
In order that a nation may rise, it must have a high ideal. Now, that ideal is, of course, the abstract Brahman. But as you all cannot be inspired by an abstract ideal, you must have a personal ideal. You have got that, in the person of Shri Ramakrishna. The reason why other personages cannot be our ideal now is, that their days are gone; and in order that Vedanta may come to everyone, there must be a person who is in sympathy with the present generation. This is fulfilled in Shri Ramakrishna. So now youIf I have told you one word for truth, it was his (Ramakrishna's) and his alone, and if I have told you many things which were not true, which were not correct, which were not beneficial to the human race, they were all mine, and on me is the responsibility.
In order that a nation may rise, it must have a high ideal. Now, that ideal is, of course, the abstract Brahman. But as you all cannot be inspired by an abstract ideal, you must have a personal ideal. You have got that, in the person of Shri Ramakrishna. The reason why other personages cannot be our ideal now is, that their days are gone; and in order that Vedanta may come to everyone, there must be a person who is in sympathy with the present generation. This is fulfilled in Shri Ramakrishna. So now you should place him before everyone. Whether one accepts him as a Sadhu or an Avatara does not matter. should place him before everyone. Whether one accepts him as a Sadhu or an Avatara does not matter.


Thursday, 21 April 2016

আমাদের জাতীয় জীবন অতীতকালে মহৎ ছিল ,তাহাতে সন্দেহ নাই , কিন্তু আমি অকপটভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের ভবিষ্যত আরও গৌরবান্বিত।



অনন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাং যে জনাঃ পর্যুপাসতে।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্।।
অর্থাৎ যারা আর কারও ওপর নির্ভর না ক'রে কেবল আমার ওপর নির্ভর ক'রে থাকে, তাদের যা কিছু দরকার, সব আমি যুগিয়ে দিই। ভগবানের এ কথাটা তো আর স্বপ্ন বা কবিকল্পনা নয়।

আজকাল লোকে 'যোগ্যতমের উদবর্তন' (Survival of the fittest)—রূপ নূতন মতবাদ লইয়া অনেক কথা বলিয়া থাকে। তাহারা মনে করে—যাহার গায়ের জোর যত বেশী, সেই তত অধিক দিন জীবিত থাকিবে। যদি তাহাই সত্য হইত, তবেপ্রাচীনকালের যে-সকল জাতি কেবল অন্যান্য জাতির সহিত যুদ্ধ—বিগ্রহে কাটাইয়াছে, তাহারাই মহাগৌরবের সহিত আজও জীবিত থাকিত এবং এই হিন্দুজাতি, যাহারা অপর একটি জাতিকে জয় করে নাই, তাহারাই এতদিন বিনষ্ট হইয়া যাইত। জনৈকা ইংরেজ মহিলা আমাকে এক সময় বলেন, হিন্দুরা কি করিয়াছে? তাহারা কোন একটা জাতিকেও জয় করিতে পারে নাই! পরন্তু এই জাতি এখনও ত্রিশকোটি প্রাণী লইয়া সদর্পে জীবিত রহিয়াছে! আর ইহা সত্য নহে যে, উহার সমুদয় শক্তি নিঃশেষিত হইয়াছে; ইহাও কখন সত্য নহে যে, এই জাতির শরীর পুষ্টির অভাবে ক্ষয় পাইতেছে। এই জাতির এখনও যথেষ্ট ছরহিয়াছে। যখনই উপযুক্ত সময় আসে, যখনই প্রয়োজন হয়, তখনই এই জীবনীশক্তি মহাবন্যার মতো প্রবাহিত হইয়া থাকে।

আপানার ভাল কেবল পরের ভালয় হয়, আপনার মুক্তি এবং ভক্তিও পরের মুক্তি ও ভক্তিতে হয়—তাইতে লেগে যাও, মেতে যাও, উন্মাদ হয়ে যাও। ঠাকুর যেমন তোমাদের ভালবাসতেন, আমি যেমন তোমাদের ভালোবাসি, তোমারা তেমনি জগৎকে ভালবাস দেখি ।

আমাদের বিশ্বাস—সব প্রাণীই ব্রহ্মস্বরূপ। প্রত্যেক আত্মাই যেন মেঘে ঢাকা সূর্যের মতো; একজনের সঙ্গে আর একজনের তফাত কেবল এই—কোথাও সূর্যের উপর মেঘের আবরণ ঘন, কোথাও এই আবরণ একটু পাতলা; আমাদের বিশ্বাস-জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ইহা সকল ধর্মেরই ভিত্তিস্বরূপ; আর শারীরিক, মানসিক বা আধ্যাত্মিক স্তরে মানবের উন্নতির সমগ্র ইতিহাসের সার কথাটাই এই-এক আত্মাই বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে আপনাকে প্রকাশ করছেন।

কিসের জোরে মানুষ উঠিয়া দাঁড়ায় ও কাজ করে?—শক্তির জোরে;এই বল—বীর্যই ধার্মিকতা,  দুর্বলতাই পাপ। যদি উপনিষদে এমন কোন শব্দ থাকে, যাহা বজ্রবেগে অজ্ঞান রাসির উপর পতিত হইয়া উহাকে একেবারে ছিন্ন—ভিন্ন করিয়া ফেলিতে পারে, তবে তাহা ‘অভীঃ’। যদি জগৎকে কোন ধর্ম শিখাইতে হয়, তবে তাহা এই ‘অভীঃ’। কি ঐহিক, কি আধ্যাত্মিক সকল বিষয়েই ‘অভীঃ’—এই মূলমন্ত্র অবলম্বন করিতে হইবে। কারণ ভয়ই পাপ ও অধঃপতনের নিশ্চিত কারণ। ভয় হইতেই মৃত্যু, ভয় হইতেই সর্বপ্রকার অবনতি আসে।

'কেউ তোমাকে বলবে সাধু, কেউ বলবে চণ্ডাল, কেউ বলবে উন্মাদ, কেউ বলবে দানব, কোনদিকে না তাকিয়ে নিজের পথে চলে যাও,'—এই কথা বলেছিলেন বার্ধক্যে সন্ন্যাসগ্রহণকারী রাজা ভর্তৃহরি—ভারতের একজন প্রাচীন সম্রাট ও মহান্ সন্ন্যাসী।

কোন ধর্মকে ফলপ্রসূ করতে হ'লে তাই নিয়ে একেবারে মেতে যাওযা দরকার; অথচ যাতে সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক ভাব না আসে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

জগতে যদি কিছু পাপ থাকে, তবে দুর্বলতাই সেই পাপ। সর্বপ্রকার দুর্বলতা ত্যাগ কর— দুর্বলতাই মৃত্যু, দুর্বলতাই পাপ।

জগতের ইতিহাস হইল – পবিত্র, গম্ভীর, চরিত্রবান্‌ এবং শ্রদ্ধাসম্পন্ন কয়েকঠ মানুষের ইতিহাস। আমাদের তিনটি বস্তুর প্রয়োজন – অনুভব করিবার হৃদয়, ধরণা করিবার মস্তষ্ক এবং কাজ করিবার হাত।

জীবনটা ক্ষণস্থায়ী স্বপ্নমাত্র, যৌবন ও সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়; দিবারাত্র বল, 'তুমি আমার পিতা, মাতা, স্বামী, দয়িত, প্রভু, ঈশ্বর—আমি তোমা ছাড়া আর কিছু চাই না, আর কিছুই চাই না, আর কিছুই না। তুমি আমাতে, আমি তোমাতে—আমি তুমি, তুমি আমি।' ধন চলে যায়, সৌন্দর্য বিলীন হয়ে যায়, জীবন দ্রুতগতিতে চলে যায়, শক্তি লোপ পেয়ে যায়, কিন্তু প্রভু চিরদিনই থাকেন—প্রেম চিরদিনই থাকে।

“আমি সত্যিকারের মা; গুরুপত্নী নয়, পাতানো মা নয়, কথার কথা মা নয় – সত্য জননী।”


“মানুষ তো ভগবানকে ভুলেই আছে। তাই যখন যখন দরকার, তিনি নিজে এক একবার এসে সাধন করে পথ দেখিয়ে দেন। এবার দেখালেন ত্যাগ।”
“যেমন ফুল নাড়তে-চাড়তে ঘ্রাণ বের হয়, চন্দন ঘষতে ঘষতে গন্ধ বের হয়, তেমনি ভগবত্তত্ত্বের আলোচনা করতে করতে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হয়।"
"ভালবাসায় সবকিছু হয়, জোর করে কায়দায় ফেলে কাউকে দিয়ে কিছু করানো যায় না।”
“সৎসঙ্গে মেশো, ভাল হতে চেষ্টা কর, ক্রমে সব হবে।”
“কাজ করা চাই বইকি, কর্ম করতে করতে কর্মের বন্ধন কেটে যায়, তবে নিষ্কাম ভাব আসে। একদণ্ডও কাজ ছেড়ে থাকা উচিত নয়।”
“মনটাকে বসিয়ে আলগা না দিয়ে কাজ করা ঢের ভাল। মন আলগা হলেই যত গোল বাধায়।”
“আমি সতেরও মা, অসতেরও মা।”
“ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে কজনে? নিন্দা ঠাট্টা করতে পারে সব্বাই, কিন্তু কি করে যে তাকে ভাল করতে হবে, তা বলতে পারে কজনে?”
“যারা এসেছে, যারা আসেনি, যারা আসবে, আমার সকল সন্তানকে জানিয়ে দিও, মা, আমার ভালবাসা, আমার আশীর্বাদ সকলের ওপর আছে।”


অন্তরঙ্গ সঙ্গে – ‘আমি কে’? ত্বমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং, ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্‌ ৷ ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা, সনাতনস্ত্বং, পুরুষো মতো মে ৷ [গীতা -- ১১।১৮]

পাঁচটা বাজিয়াছে। ভক্ত কয়টি যে যার বাড়িতে চলিয়া গেলেন। কেবল মাস্টার ও নরেন্দ্র রহিলেন। নরেন্দ্র গাড়ু লইয়া হাঁসপুকুরের ও ঝাউতলার দিকে মুখ ধুইতে গেলেন। মাস্টার ঠাকুরবাড়ির এদিক-ওদিক পায়চারি করিতেছেন: কিয়ৎক্ষণ পরে কুঠির কাছ দিয়া হাঁসপুকুরের দিকে আসিতে লাগিলেন। দেখিলেন, পুকুরের দক্ষিণদিকের সিঁড়ির চাতালের উপর শ্রীরামকৃষ্ণ দাঁড়াইয়া, নরেন্দ্র গাড়ু হাতে করিয়া মুখ ধুইয়া দাঁড়াইয়া আছেন। ঠাকুর বলিতেছেন, “দেখ্‌, আর একটু বেশি বেশি আসবি। সবে নূতন আসছিস কিনা! প্রথম আলাপের পর নূতন সকলেই ঘন ঘন আসে, যেমন -- নূতন পতি (নরেন্দ্র ও মাস্টারের হাস্য)। কেমন আসবি তো?” নরেন্দ্র ব্রাহ্মসমাজের ছেলে, হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “হাঁ, চেষ্টা করব।”
সকলে কুঠির পথ দিয়া ঠাকুরের ঘরে আসিতেছেন। কুঠির কাছে মাস্টারকে ঠাকুর বলিলেন, “দেখ্‌, চাষারা হাটে গরু কিনতে যায়; তারা ভাল গরু, মন্দ গরু বেশ চেনে। ল্যাজের নিচে হাত দিয়ে দেখে। কোনও গরু ল্যাজে হাত দিলে শুয়ে পড়ে, সে গরু কেনে না। যে গরু ল্যাজে হাত দিলে তিড়িং-মিড়িং করে লাফিয়ে উঠে সেই গরুকেই পছন্দ করে। নরেন্দ্র সেই গরুর জাত; ভিতরে খুব তেজ!” এই বলিয়া ঠাকুর হাসিতেছেন। “আবার কেউ কেউ লোক আছে, যেন চিঁড়ের ফলার, আঁট নাই, জোর নাই, ভ্যাৎ ভ্যাৎ করছে।”
সন্ধ্যা হইল। ঠাকুর ঈশ্বরচিন্তা করিতেছেন; মাস্টারকে বলিলেন, “তুমি নরেন্দ্রের সঙ্গে আলাপ করগে, আমায় বলবে কিরকম ছেলে।”
আরতি হইয়া গেল। মাস্টার অনেকক্ষণ পরে চাঁদনির পশ্চিম ধারে নরেন্দ্রকে দেখিতে পাইলেন। পরস্পর আলাপ হইতে লাগিল। নরেন্দ্র বলিলেন, আমি সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের। কলেজে পড়িতেছি ইত্যাদি।
রাত হইয়াছে -- মাস্টার এইবার বিদায় গ্রহণ করিবেন। কিন্তু যাইতে আর পারিতেছেন না। তাই নরেন্দ্রের নিকট হইতে আসিয়া ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে খুঁজিতে লাগিলেন। তাঁহার গান শুনিয়া হৃদয়, মন মুগ্ধ হইয়াছে; বড় সাধ যে, আবার তাঁর শ্রীমুখে গান শুনিতে পান। খুঁজিতে খুঁজিতে দেখিলেন, মা-কালীর মন্দিরে মার দুইপার্শ্বে আলো জ্বলিতেছিল। বৃহৎ নাটমন্দিরে একটি আলো জ্বলিতেছে, ক্ষীণ আলোক। আলো ও অন্ধকার মিশ্রিত হইলে যেরূপ হয়, সেইরূপ নাটমন্দিরে দেখাইতেছিল।
মাস্টার ঠাকুরের গান শুনিয়া আত্মহারা হইয়াছেন। যেন মন্ত্রমুগ্ধ সর্প। এক্ষণে সঙ্কুচিতভাবে ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আজ আর কি গান হবে?” ঠাকুর চিন্তা করিয়া বলিলেন, “না, আজ আর গান হবে না” এই বলিয়া কি যেন মনে পড়িল, অমনি বলিলেন, “তবে এক কর্ম করো। আমি বলরামের বাড়ি কলিকাতায় যাব, তুমি যেও, সেখানে গান হবে।”
মাস্টার -- যে আজ্ঞা।
শ্রীরামকৃষ্ণ -- তুমি জান? বলরাম বসু?
মাস্টার -- আজ্ঞা না।
শ্রীরামকৃষ্ণ -- বলরাম বসু। বোসপাড়ায় বাড়ি।
মাস্টার -- যে আজ্ঞা, আমি জিজ্ঞাসা করব।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের সঙ্গে নাটমন্দিরে বেড়াইতে বেড়াইতে) -- আচ্ছা, তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, আমাকে তোমার কি বোধ হয়?
মাস্টার চুপ করিয়া আছেন। ঠাকুর আবার বলিতেছেন,
“তোমার কি বোধ হয়? আমার কয় আনা জ্ঞান হয়েছে?”
মাস্টার – ‘আনা’ এ-কথা বুঝতে পারছি না; তবে এরূপ জ্ঞান বা প্রেমভক্তি বা বিশ্বাস বা বৈরাগ্য বা উদার ভাব কখন কোথাও দেখি নাই।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ হাসিতে লাগিলেন।
এরূপ কথাবার্তার পর মাস্টার প্রণাম করিয়া বিদায় গ্রহণ করিলেন।
সদর ফটক পর্যন্ত আসিয়া আবার কি মনে পড়িল, অমনি ফিরিলেন। আবার নাটমন্দিরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে আসিয়া উপস্থিত।
ঠাকুর সেই ক্ষীনালোকমধ্যে একাকী পাদচারণ করিতেছেন। একাকী -- নিঃসঙ্গ। পশুরাজ যেন অরণ্যমধ্যে আপন মনে একাকী বিচরণ করিতেছেন! আত্মারাম; সিংহ একলা থাকতে, একলা বেড়াতে ভালবাসে! অনপেক্ষ!
অবাক্‌ হইয়া মাস্টার আবার সেই মহাপুরুষদর্শন করিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) -- আবার যে ফিরে এলে?
মাস্টার -- আজ্ঞা, বোধ হয় বড়-মানুষের বাড়ি -- যেতে দিবে কি না; তাই যাব না ভাবছি। এইখানে এসেই আপনার সঙ্গে দেখা করব।
শ্রীরামকৃষ্ণ -- না গো, তা কেন? তুমি আমার নাম করবে। বলবে তাঁর কাছে যাব, তাহলেই কেউ আমার কাছে নিয়ে আসবে।
মাস্টার “যে আজ্ঞা” বলিয়া আবার প্রণাম করিয়া বিদায় লইলেন।

ভক্তির উপায় – শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত

মাস্টার (বিনীতভাবে) — ঈশ্বরে কি করে মন হয়? শ্রীরামকৃষ্ণ — ঈশ্বরের নামগুণগান সর্বদা করতে হয়। আর সৎসঙ্গ — ঈশ্বরের ভক্ত বা সাধু, এঁদের কাছে মাঝে মাঝে যেতে হয়। সংসারের ভিতর ও বিষয়কাজের ভিতর রাতদিন থাকলে ঈশ্বরে মনে হয় না। মাঝেমাঝে নির্জনে গিয়ে তাঁর চিন্তা করা বড় দরকার। প্রথম অবস্থায় মাঝে মাঝে নির্জন না হলে ঈশ্বরে মন রাখা বড়ই কঠিন। “যখন চারাগাছ থাকে, তখন তার চারিদিকে বেড়া দিতে হয়। বেড়া না দিলে ছাগল-গরুতে খেয়ে ফেলে। “ধ্যান করবে মনে, কোণে ও বনে। আর সর্বদা সদসৎ বিচার করবে। ঈশ্বরই সৎ — কিনা নিত্যবস্তু, আর সব অসৎ — কিনা অনিত্য। এই বিচার করতে করতে অনিত্য বস্তু মন থেকে ত্যাগ করবে।” মাস্টার (বিনীতভাবে) — সংসারে কিরকম করে থাকতে হবে? [গৃহস্থ সন্ন্যাস -- উপায় -- নির্জনে সাধন ] শ্রীরামকৃষ্ণ — সব কাজ করবে কিন্তু মন ঈশ্বরেতে রাখবে। স্ত্রী, পুত্র, বাপ, মা — সকলকে নিয়ে থাকবে ও সেবা করবে। যেন কত আপনার লোক। কিন্তু মনে জানবে যে, তারা তোমার কেউ নয়। “বড় মানুষের বাড়ির দাসী সব কাজ কচ্ছে, কিন্তু দেশে নিজের বাড়ির দিকে মন পড়ে আছে। আবার সে মনিবের ছেলেদের আপনার ছেলের মতো মানুষ করে। বলে ‘আমার রাম’ ‘আমার হরি’, কিন্তু মনে বেশ জানে — এরা আমার কেউ নয়। “কচ্ছপ জলে চরে বেড়ায়, কিন্তু তার মন কোথায় পড়ে আছে জানো? — আড়ায় পড়ে আছে। যেখানে তার ডিমগুলি আছে। সংসারের সব কর্ম করবে, কিন্তু ঈশ্বরে মন ফেলে রাখবে। “ঈশ্বরে ভক্তিলাভ না করে যদি সংসার করতে যাও তাহলে আরও জড়িয়ে পড়বে। বিপদ, শোক, তাপ — এ-সবে অধৈর্য হয়ে যাবে। আর যত বিষয়-চিন্তা করবে ততই আসক্তি বাড়বে। “তেল হাতে মেখে তবে কাঁঠাল ভাঙতে হয়! তা না হলে হাতে আঠা জড়িয়ে যায়। ঈশ্বরে ভক্তিরূপ তেল লাভ করে তবে সংসারের কাজে হাত দিতে হয়। “কিন্তু এই ভক্তিলাভ করতে হলে নির্জন হওয়া চাই। মাখন তুলতে গেলে নির্জনে দই পাততে হয়। দইকে নাড়ানাড়ি করলে দই বসে না। তারপর নির্জনে বসে, সব কাজ ফেলে দই মন্থন করতে হয়। তবে মাখন তোলা যায়। “আবার দেখ, এই মনে নির্জনে ঈশ্বরচিন্তা করলে জ্ঞান বৈরাগ্য ভক্তি লাভ হয়। কিন্তু সংসারে ফেলে রাখলে ওই মন নীচ হয়ে যায়। সংসারে কেবল কামিনী-কাঞ্চন চিন্তা। “সংসার জল, আর মনটি যেন দুধ। যদি জলে ফেলে রাখ, তাহলে দুধে-জলে মিশে এক হয়ে যায়, খাঁটি দুধ খুঁজে পাওয়া যায় না। দুধকে দই পেতে মাখন তুলে যদি জলে রাখা যায়, তাহলে ভাসে। তাই নির্জনে সাধনা দ্বারা আগে জ্ঞানভক্তিরূপ মাখন লাভ করবে। সেই মাখন সংসার-জলে ফেলে রাখলেও মিশবে না, ভেসে থাকবে। “সঙ্গে সঙ্গে বিচার করা খুব দরকার। কামিনী-কাঞ্চন অনিত্য। ঈশ্বরই একমাত্র বস্তু। টাকায় কি হয়? ভাত হয়, ডাল হয়, থাকবার জায়গা হয় — এই পর্যন্ত। ভগবানলাভ হয় না। তাই টাকা জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না — এর নাম বিচার, বুঝেছ? মাস্টার — আজ্ঞে হাঁ; প্রবোধচন্দ্রোদয় নাটক আমি সম্প্রতি পড়েছি, তাতে আছে ‘বস্তুবিচার’ । শ্রীরামকৃষ্ণ — হাঁ, বস্তুবিচার! এই দেখ, টাকাতেই বা কি আছে, আর সুন্দর দেহেই বা কি আছে! বিচার কর, সুন্দরীর দেহেতেও কেবল হাড়, মাংস, চর্বি, মল, মূত্র — এই সব আছে। এই সব বস্তুতে মানুষ ঈশ্বরকে ছেড়ে কেন মন দেয়? কেন ঈশ্বরকে ভুলে যায়? [ঈশ্বরদর্শনের উপায় ] মাস্টার — ঈশ্বরকে কি দর্শন করা যায়? শ্রীরামকৃষ্ণ — হাঁ, অবশ্য করা যায়। মাঝে মাঝে নির্জনে বাস; তাঁর নামগুণগান, বস্তুবিচার — এই সব উপায় অবলম্বন করতে হয়। মাস্টার — কী অবস্থাতে তাঁকে দর্শন হয়? শ্রীরামকৃষ্ণ — খুব ব্যাকুল হয়ে কাঁদলে তাঁকে দেখা যায়। মাগছেলের জন্য লোকে একঘটি কাঁদে, টাকার জন্য লোকে কেঁদে ভাসিয়ে দেয়, কিন্তু ঈশ্বরের জন্য কে কাঁদছে? ডাকার মতো ডাকতে হয়। এই বলিয়া ঠাকুর গান ধরিলেন: “ডাক দেখি মন ডাকার মতো কেমন শ্যামা থাকতে পারে। কেমন শ্যামা থাকতে পারে, কেমন কালী থাকতে পারে।। মন যদি একান্ত হও, জবা বিল্বদল লও, ভক্তি-চন্দন মিশাইয়ে (মার) পদে পুষ্পাঞ্জলি দাও।। “ব্যাকুলতা হলেই অরুণ উদয় হল। তারপর সূর্য দেখা দিবেন। ব্যাকুলতার পরই ঈশ্বরদর্শন। “তিন টান একত্র হলে তবে তিনি দেখা দেন — বিষয়ীর বিষয়ের উপর, মায়ের সন্তানের উপর, আর সতীর পতির উপর টান। এই তিন টান যদি কারও একসঙ্গে হয়, সেই টানের জোরে ঈশ্বরকে লাভ করতে পারে। “কথাটা এই, ঈশ্বরকে ভালবাসতে হবে। মা যেমন ছেলেকে ভালবাসে, সতী যেমন পতিকে ভালবাসে, বিষয়ী যেমন বিষয় ভালবাসে। এই তিনজনের ভালবাসা, এই তিন টান একত্র করলে যতখানি হয়, ততখানি ঈশ্বরকে দিতে পারলে তাঁর দর্শন লাভ হয়। “ব্যাকুল হয়ে তাঁকে ডাকা চাই। বিড়ালের ছানা কেবল ‘মিউ মিউ’ করে মাকে ডাকতে জানে। মা তাকে যেখানে রাখে, সেইখানেই থাকে — কখনো হেঁশেলে, কখন মাটির উপর, কখন বা বিছানার উপর রেখে দেয়। তার কষ্ট হলে সে কেবল মিউ মিউ করে ডাকে, আর কিছু জানে না। মা যেখানেই থাকুক, এই মিউ মিউ শব্দ শুনে এসে পড়ে।”

মাতৃকথা - অমৃত সমান

ঠাকুর তো এবার দয়া করে লোকের মঙ্গলের জন্য কঠোর তপস্যা করে গেলেন | ছিল শুধু হাড় আর চামড়া, তার উপর আবার লোকের পাপ নিয়ে রোগ ভোগ| তাঁতে ভক্তি-শ্রদ্ধা-বিশ্বাস করলেই,  তাঁর নাম জপ করলেই,  তাঁর লীলা ধ্যান করলেই কুণ্ডলিনী আনন্দে জেগে উঠবেন, এতটুকুও কঠোরতা করতে হবে না | কলিকাল, এখন কি লোকে সত্য-ত্রেতার মত তপস্যা করতে পারে?  এখন অন্নগত প্রাণ | ঠাকুরের নাম কর|গুরু, ঈশ্বরের সাহায্য না পেলে কেউ কি আপনি বন্ধন খুলতে পারে?  তাই অতি কঠোর তপস্যা করে তার ফল, যে সব ভক্তেরা আসবে,  তাদের জন্য সঞ্চয় করে গেলেন |..... তিনি তো কৃপা করে দরজায় দাঁড়িয়ে, এখন তুমি দরজা খুললেই হয়|

Wednesday, 20 April 2016

স্বামীজীৰ বাণী

প্ৰথমতে নিজৰ ভৰিৰ ওপৰত থিয় হোৱা, ইয়াৰ পিছত সকলো জাতিৰ পৰা শিক্ষা গ্ৰহণ কৰা,  যিমান পাৰা সেইবোৰক নিজৰ কৰি লোৱা; যিবোৰ তোমাৰ কামত লাগিব সেইবোৰক গ্ৰহণ কৰা | কিন্তু এটা কথা মনত ৰাখিবা তোমালোক যিহেতু হিন্দু (ভাৰতবাসী), সেই হেতু তোমালোকে যি প্ৰকাৰৰ শিক্ষাই গ্ৰহণ নকৰা কিয়, ই যেন তোমালোকৰ জাতীয় জীৱনৰ মূলমন্ত্ৰ-স্বৰূপ ধৰ্মৰ তলতে ঠাই পায় |

Swamiji's Quotation (2)


We are responsible for what we are, and whatever we wish ourselves to be, we have the power to make ourselves.  if what we are now has been the result of our own past actions,  it certainly follows that whatever we wish to be in future can be produced by our present actions; so we have to know how to act. 
     Swami Vivekananda

Swamiji's Quotation (1)

The history of the world is the history of a few men who had faith in themsrlves.  That faith calls out the divinity within. You can do anything.  You fail onlh when you donot strive sifficiently to manifest infinite power. As soon as a man or a nation loses faith,  death comes. 
                                       Swami Vivekananda

পরমার্থ প্রসঙ্গ

সংসার অসার, অনিত্য, তিনি একমাত্র সার সত্য, এই ভাবটি যতদিন মনে দৃঢ় না হয়়, ততদিন ধ্যান করবার সময় মন চঞ্চল হবেই |
ইন্দ্রিয়সুখে যত বিতৃষ্ণা আসবে, ভগবানে অনুরাগ তত বাড়বে, মনও তত একাগ্র হবে |
তাঁর প্রেমের স্বাদ কণিকামাত্রও পেলে জগতের সমস্ত সুখ তুচ্ছ, ঘৃণ্য হয়ে যাবে |

Joy thakur

ìDu Saó½ peR ik Heb?ibebk-obraegYr siHt b† na pRel daiÝkta,AHªkar ŸbeR Zay maº| gãÇù ny, gãiÇùÎgaƒF|Saeó½ bailet icinet imiSey VeC| tar meDY ŸTek icinFuk™ ŸbeC lwya bR kifn|

ŸZ Ÿkan rkem Hˆk taƒek laB Hel† Hela | s„ôát na† janlam|
pi¨t , mUàK, skl ŸCelr ˆpr† taƒr sman kápa| bYak™lta …el† Hela|baepr paƒc ŸCel Taek; Ÿkˆ "baba' blet paer, Ÿkˆ "ba'bel haek, Ÿkˆ "pa' bel haek, sbFa ˆ¬carN kret paer na| ŸZ "baba' bel haek tar ˆpr ik Zara "ba' ba "pa' bel haek taedr Ÿcey ŸbiS Balbasa Heb?bap janeC …ra kic ŸCel, ifk ˆ¬carN kret pareC na| baepr ŸCaF bR skelr ˆpr sman ŸøH |

Tuesday, 19 April 2016

পরমার্থ - প্রসঙ্গ

যথার্থ ভক্তের ভাব, সাধকের ভাব হচ্ছে -- আমি জপধ্যান করে আনন্দ পাই, না করে থাকতে পারি না, তাই করি; প্রাণ জুড়োবার আর যে অন্য উপায় নেই, তাই করি; জপধ্যান যে আমার নিশ্বাস -প্রশ্বাসের মতো,না নিলে যে প্রাণে বাঁচি না, তাই করি | তিনি যে আমার প্রাণের প্রাণ, আত্মার আত্মা | তাঁকে পেতেই হবে,যেরকম করেই হোক | না পেলে যে পাগল হয়ে যাব, প্রাণ যাবে, এ জীবনই বৃথা হবে | এরকম ব্যাকুলতা, এরকম রোক হলে তিনি কৃপা করবেনই | তিনি যে দয়াময় | তাঁকে মন:প্রাণ এক করে ডাকলে, তাঁর জন্যে সর্বস্ব ত্যাগ করলে, অনন্যশরণ হলে তিনি দেখা দেবেনই দেবেন |

অমৃত কথা

শ্রীরামকৃষ্ণ - কেউ কেউ জ্ঞানচর্চা করে বলে মনে করে, আমি কি হইছি। হয়তো একটু বেদান্ত পড়েছে। কিন্তু ঠিক জ্ঞান হলে অহংকার হয় না, অর্থাৎ যদি সমাধি হয়, আর মানুষ তাঁর সঙ্গে এক হয়ে যায়, তাহলে আর অহংকার থাকে না। সমাধি না হলে ঠিক জ্ঞান হয় না। সমাধি হলে তাঁর সঙ্গে এক হওয়া যায়। আর অহং থাকে না।  কিরকম জানো? ঠিক দুপুর বেলা সূর্য ঠিক মাথার উপর উঠে। তখন মানুষটা চারিদিকে চেয়ে দেখে, আর ছায়া নাই। ঠিক জ্ঞান হলে - সমাধিস্থ হলে - অহংরূপ ছায়া থাকে না।  ঠিক জ্ঞান হবার পর যদি অহং থাকে, তবে জেনো, ‘বিদ্যার আমি’ ‘ভক্তের আমি’ ‘দাস আমি’। সে ‘অবিদ্যার আমি’ নয়।  আবার জ্ঞান ভক্তি দুইটিই পথ - যে পথ দিয়ে যাও, তাঁকেই পাবে। জ্ঞানী একভাবে তাঁকে দেখে, ভক্ত আর-একভাবে তাঁকে দেখে। জ্ঞানীর ঈশ্বর তেজোময়, ভক্তের রসময়।“

শ্রীমৎ স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজজীর সাথে কথোপকথন

Monday, 18 April 2016

মা ও তাঁর লীলা সহচরী

ধর্ম প্রসঙ্গে -স্বামী ব্রহ্মানন্দ

ইন্দ্রিয়ের কর্তা মনকে দমন করতে হবে | আবার মন বুদ্ধি উভয়কেই আত্মাতে লয় করতে হবে | মনকে একদম মেরে না ফেললে চলবে না | সাধুসঙ্গে ইন্দ্রিয়গুলি চুপ মেরে আছে, মনে করো না ও-গুলি আর নেই | সমাধি না হলে ওসব যায় না | একটু ছেড়ে দাও, দেখবে দ্বিগুন জোরে ইন্দ্রিয়গুলি ছোবল মারবে | সেইজন্য খুব সাবধানে থাকা প্রয়োজন, যতক্ষণ না মন-বুদ্ধির পারে যাচ্ছে |

মা আছেন আর আমি আছি

কথামৃত

মানুষ নিজের মুক্তির চেষ্টায় জগৎপ্রপঞ্চের সম্বন্ধ একেবারে ত্যাগ করিতে চায়, মানুষ নিজ আত্মীয়-স্বজন স্ত্রী-পুত্র বন্ধু-বান্ধবের মায়া কাটাইয়া সংসার হইতে দূরে – অতি দূরে পলাইয়া যায় ; চেষ্টা করে দেহগত সকল সম্বন্ধ-পুরাতন সকল সংস্কার ত্যাগ করিতে, এমন কি সে নিজে যে সার্ধ –ত্রিহস্ত-পরিমিত দেহধারী মানুষ, ইহাও ভুলিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে ; কিন্তু তাহার অন্তরের অন্তরে সর্বদাই সে একটি মৃদু অস্ফুট ধ্বনি শুনিতে পায়, তাহার কর্ণে একটি সুর সর্বদা বাজিতে থাকে, কে যেন দিবারাত্র তাহার কানে কানে মৃদু স্বরে বলিতে থাকে , ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’ । --স্বামীজী

Thakur amar pran

ঠাকুর আমার প্রাণ
ঠাকুর আমার গান

Sunday, 17 April 2016

Kathamrita

শ্রীরামকৃষ্ণ - কেউ কেউ জ্ঞানচর্চা করে বলে মনে করে, আমি কি হইছি। হয়তো একটু বেদান্ত পড়েছে। কিন্তু ঠিক জ্ঞান হলে অহংকার হয় না, অর্থাৎ যদি সমাধি হয়, আর মানুষ তাঁর সঙ্গে এক হয়ে যায়, তাহলে আর অহংকার থাকে না। সমাধি না হলে ঠিক জ্ঞান হয় না। সমাধি হলে তাঁর সঙ্গে এক হওয়া যায়। আর অহং থাকে না।  কিরকম জানো? ঠিক দুপুর বেলা সূর্য ঠিক মাথার উপর উঠে। তখন মানুষটা চারিদিকে চেয়ে দেখে, আর ছায়া নাই। ঠিক জ্ঞান হলে - সমাধিস্থ হলে - অহংরূপ ছায়া থাকে না।  ঠিক জ্ঞান হবার পর যদি অহং থাকে, তবে জেনো, ‘বিদ্যার আমি’ ‘ভক্তের আমি’ ‘দাস আমি’। সে ‘অবিদ্যার আমি’ নয়।  আবার জ্ঞান ভক্তি দুইটিই পথ - যে পথ দিয়ে যাও, তাঁকেই পাবে। জ্ঞানী একভাবে তাঁকে দেখে, ভক্ত আর-একভাবে তাঁকে দেখে। জ্ঞানীর ঈশ্বর তেজোময়, ভক্তের রসময়।“