Thursday, 30 June 2016

চৈতন্য ও প্রকৃতি

চৈতন্যকে চৈতন্যরূপে প্রত্যক্ষ করাই ধর্ম, জড়রূপে দেখা নয়।
ধর্ম হইতেছে বিকাশ। প্রত্যেককে নিজে উহা উপলব্ধি করিতে হইবে। খ্রীষ্টানগণের বিশ্বাস, মানবের পরিত্রাণের নিমিত্ত যীশুখ্রীষ্ট প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন। তোমাদের নিকট উহা একটি বিশিষ্ট মতবাদের উপর বিশ্বাস, এবং এই বিশ্বাসেই নিহিত তোমাদের মুক্তি। আমাদের নিকট মুক্তির সহিত বিশিষ্ট মতবাদের কোন প্রকার সম্পর্ক নাই। প্রত্যেকেরই স্বীয় মনোমত কোন মতবাদে বিশ্বাস থাকিতে পারে; অথবা সে কোন মতবাদে বিশ্বাস না করিতেও পারে। যীশুখ্রীষ্ট কোন এক সময়ে ছিলেন, অথবা তিনি কোনদিন ছিলেন না, তোমার নিকট এই উভয়ের পার্থক্য কি? জ্বলন্ত ঝোপের (burning bush) মধ্যে মুশার ঈশ্বর-দর্শনের সহিত তোমার কি সম্পর্ক? মুশা জ্বলন্ত ঝোপে ঈশ্বরকে দর্শন করিয়াছিলেন, এই তত্ত্বের দ্বারা তোমার ঈশ্বর-দর্শন প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাই যদি হয়, তবে মুশা যে আহার করিয়াছিলেন, ইহাই তোমার পক্ষে যথেষ্ট; তোমার আহার-গ্রহণে নিবৃত্ত হওয়া উচিত। একটি অপরটির মতই সমভাবে যুক্তিযুক্ত। আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন মহাপুরুষগণের বিবরণসমূহ আমাদিগকে তাঁহাদের পথে অগ্রসর হইতে ও স্বয়ং ধর্ম উপলব্ধি করিতে প্রণোদিত করে, ইহা ব্যতীত অপর কোন কল্যাণ সাধন করে না। যীশুখ্রীষ্ট, মুশা বা অপর কেহ যাহা কিছু করিয়াছেন, তাহা আমাদিগকে অগ্রসর হইতে উৎসাহিত করা ব্যতীত আর কিছুমাত্র সাহায্য করিতে পারে না।
প্রত্যেক ব্যক্তির একটি বিশেষ স্বভাব আছে, উহা তাহার প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য। ঐ বৈশিষ্ট্য তাহাকে অনুসরণ করিতেই হইবে। উহার মধ্য দিয়াই তাহাকে মুক্তির পথ খুঁজিতে হইবে। তোমার গুরুই তোমাকে বলিয়া দিবেন, তোমার নির্দিষ্ট পথ কোন্‌টি এবং সেই পথে তোমাকে পরিচালিত করিবেন। তোমার মুখ দেখিয়া তিনি বলিয়া দিবেন, তুমি কোন্ অবস্থায় ও কিরূপ সাধনার অধিকারী এবং ঐ বিষয়ে তোমাকে নির্দেশ দিবার ক্ষমতাও তাঁহার থাকিবে। অপরের পথ অনুসরণ করিবার চেষ্টা করা উচিত নয়, কেননা উহা তাঁহার জন্যই নির্দিষ্ট, তোমার জন্য নয়। নির্দিষ্ট পথ পাইলে নিশ্চিন্ত হইয়া থাকা ব্যতীত আর কিছুই করিবার নাই, স্রোতই তোমাকে মুক্তির দিকে টানিয়া লইয়া যাইবে। অতএব যখন সেই নির্ধারিত পথ পাইবে, তাহা হইতে ভ্রষ্ট হইও না। তোমার পন্থা তোমার পক্ষে শ্রেয়ঃ, কিন্তু উহা যে অপরের পক্ষেও শ্রেয়ঃ হইবে, তাহার কোন প্রমাণ নাই।
প্রকৃত আধ্যাত্মিক-শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি চৈতন্যকে চৈতন্যরূপেই প্রত্যক্ষ করেন, জড়রূপে নয়। চৈতন্যই প্রকৃতিকে গতিশীল করে, চৈতন্যই সত্য বস্তু। ক্রিয়ার অস্তিত্ব প্রকৃতির মধ্যেই বিদ্যমান, চৈতন্যে নয়। চৈতন্য সর্বদা এক, অপরিণামী ও শাশ্বত। চৈতন্য ও জড় প্রকৃতপক্ষে এক, কিন্তু চৈতন্য স্ব-স্বরূপে কখনই জড় নয়। জড় কখনও জড়সত্তা-রূপে চৈতন্য হইতে পারে না। আত্মা কখনও ক্রিয়া করেন না। কেনই বা করিবেন? আত্মা বিদ্যমান—ইহাই যথেষ্ট। আত্মা শুদ্ধ, সৎ ও নিরবচ্ছিন্ন। আত্মায় ক্রিয়ার কোন আবশ্যকতা নাই।
নিয়ম দ্বারা তুমি বদ্ধ নও। উহা তোমার মায়িক প্রকৃতির অন্তর্গত। মন প্রকৃতিরই এলাকায় ও নিয়মাধীন। সমগ্র প্রকৃতি স্বীয় কর্মজনিত নিয়মের অধীন এবং এই নিয়ম অলঙ্ঘনীয়। প্রকৃতির একটি নিয়মও যদি লঙ্ঘন করিতে সমর্থ হও, তবে মুহূর্তমধ্যে প্রকৃতি ধ্বংস হইবে, প্রকৃতি বলিয়া কিছু থাকিবে না। যিনি মুক্তিলাভ করেন, তিনিই প্রকৃতির নিয়ম ভাঙিয়া ফেলিতে সমর্থ, তাঁহার নিকট প্রকৃতি লয়প্রাপ্ত হয়; প্রকৃতির কোন প্রভাব আর তাঁহার উপর থাকে না। প্রত্যেকেই একদিন চিরকালের জন্য এই নিয়ম ভাঙিয়া ফেলিবে, আর তখনই প্রকৃতির সহিত তাহার দ্বন্দ্ব শেষ হইয়া যাইবে।
গভর্ণমেণ্ট, সমিতি প্রভৃতি অল্পবিস্তর ক্ষতিকর। সকল সমিতিই কতকগুলি দোষযুক্ত সাধারণ নিয়মের উপর স্থাপিত। যে মুহূর্তে তোমরা নিজেদের একটি সঙ্ঘে পরিণত করিলে, সেই মুহূর্ত হইতে ঐ সঙ্ঘের বহির্ভূত সকলের প্রতি বিদ্বেষ আরম্ভ হইল। যে কোন প্রতিষ্ঠানে যোগদানের অর্থ নিজের উপর গণ্ডী টানা ও স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা। প্রকৃত কল্যাণ হইতেছে সর্বোত্তম স্বাধীনতা। প্রত্যেক ব্যক্তিকে এই স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হইতে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। সাধুতা যত বাড়ে কৃত্রিম নিয়মও তত হ্রাস পায়। ঐগুলি বাস্তবিক পক্ষে নিয়মই নয়। কারণ—উহা যদি সত্যই নিয়ম হইত, তবে কখনই উহা লঙ্ঘন করা যাইত না। এই তথাকথিত নিয়মগুলি যে ভাঙিয়া ফেলা যায়, তাহাতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, ঐগুলি প্রকৃত নিয়ম নয়। যথার্থ নিয়ম অলঙ্ঘনীয়।
যখন কোন চিন্তা দমন করিয়া ফেল, তখন উহা স্প্রিং-এর ন্যায় কুণ্ডলী পাকাইয়া অদৃশ্যভাবে চাপা পড়িয়া থাকে মাত্র। সুযোগ পাইলেই মুহূর্তমধ্যে—দমনের ফলে সংহত সমস্ত রুদ্ধশক্তি লইয়া সবেগে বাহির হইয়া আসে, এবং তারপর যাহা ঘটিতে বহু সময় লাগিত, কয়েক মুহূর্তে তাহা ঘটিয়া যায়।
প্রতিটি ক্ষুদ্র সুখ বৃহৎ দুঃখ বহন করে। শক্তি এক—এক সময়ে যাহা আনন্দরূপে ব্যক্ত হয়, অন্য সময়ে তাহারই অভিব্যক্তি দুঃখ। কতকগুলি অনুভূতির অবসান হইলেই অপর কতকগুলি আরম্ভ হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নততর ব্যক্তিগণের কাহারও মধ্যে দুইটি, এমন কি একশত বিভিন্ন চিন্তা একই সময়ে কার্য করিতে থাকে।
হইতেছে স্বীয় স্বভাবের পরিণতি—মানসী ক্রিয়া অর্থে সৃষ্ট। শব্দ চিন্তার ও রূপ (আকার) শব্দের অনুসরণ করে। মনে আত্মা প্রতিফলিত হইবার পূর্বে মানসিক ও শারীরিক সর্বপ্রকার কার্য করিবার সঙ্কল্প রুদ্ধ করা প্রয়োজন।

Wednesday, 29 June 2016

স্বামীজীর বাণী

পাশ্চাত্যবাসীদের উদ্দ্যেশে আমার বাণী বীরত্বপূর্ণ। দেশবাসীর উদ্দেশে আমার বাণী বলিষ্ঠতর।
ঐশ্বর্যময় পাশ্চাত্যে চার বৎসর বাস করার ফলে ভারতবর্ষকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করিয়াছি। অন্ধকার দিকগুলি গাঢ়তর এবং আলোকিত দিকগুলি উজ্জ্বলতর হইয়াছে।
 পর্যবেক্ষণের ফল—ভারতবাসীর অধঃপতন হইয়াছে, এ কথা সত্য নহে।
প্রত্যেক দেশের যে সমস্যা, এখানেও সেই সমস্যা বিভিন্ন জাতির একীকরণ; কিন্তু ভারতবর্ষের ন্যায় এই সমস্যা অন্যত্র এত বিশালরূপে দেখা দেয় নাই।
 ভাষাগত ঐক্য, শাসন-ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি ধর্ম—একীকরণের শক্তিরূপে কাজ করিয়াছে।
অন্যান্য দেশে ইহা দৈহিক বলের দ্বারা সাধিত হইয়াছে, অর্থাৎ কোন গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে অপরাপর সংস্কৃতির উপর জোর করিয়া চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছে। ফলে ক্ষণস্থায়ী বিপুলপ্রাণশক্তিসম্পন্ন জাতীয় জীবন দেখা দিযাছে, তারপর উহার ধ্বংস হইয়াছে।
অপর পক্ষে ভারতবর্ষে সমস্যা যত বিরাট, উহা সমাধানের চেষ্টাও তত শান্ত উপায়ে দেখা দিয়াছে। প্রাচীনতম কাল হইতে ভিন্ন আচার-পদ্ধতি, বিশেষভাবে বিভিন্ন গোষ্ঠির ধর্মসম্প্রদায়কে স্বীকার করিয়া লওয়া হইয়াছে।

Friday, 10 June 2016

সর্ব ধর্ম সমন্বয় ও শ্রীরামকৃষ্ণ


  যত লোক দেখি, ধর্ম ধর্ম করে -- এ ওর সঙ্গে ঝগড়া করছে, ও ওর সঙ্গে ঝগড়া করছে ৷ হিন্দু,  মুসলমান, ব্রহ্মজ্ঞানী, শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব -- সব পরস্পর ঝগড়া ৷ এ বুদ্ধি নাই যে, যাঁকে কৃষ্ণ বলছ, তাঁকেই শিব, তাঁকেই আদ্যাশক্তি বলা হয়; তাঁকেই যিশু, তাঁকেই আল্লা বলা হয় ৷ এক রাম তাঁর হাজার নাম ৷ এরকম মনে করা ভাল নয় যে,  আমার ধর্মই ঠিক, আর অন্য সকলের ধর্ম ভুল ৷ সব পথ দিয়েই তাঁকে পাওয়া যায় ৷ আন্তরিক ব্যাকুলতা থাকলেই হল ৷ অনন্ত পথ -- অনন্ত মত ৷

   যে ধর্মই হোক, যে মতই হোক, সকলেই সেই এক ঈশ্বরকে ডাকছে; তাই কোন ধর্ম,  কোনও মতকে অশ্রদ্ধা বা ঘৃণা করতে নাই ৷

   ছাতের উপর উঠতে হলে মই,  বাঁশ,  সিঁড়ি ইত্যাদি নানা উপায়ে যেমন ওঠা যায়, তেমনই এক ঈশ্বরের কাছে যাবার অনেক উপায় আছে ৷ প্রত্যেক ধর্মই এক - একটি উপায় ৷
     যত মত, তত পথ ৷ যেমন এই কালীবাড়িতে আসতে হলে কেউ নৌকায়,  কেউ গাড়িতে, কেউ বা হেঁটে আসে, সেই রূপ ভিন্ন ভিন্ন মতের দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন লোকের সচ্চিদানন্দ লাভ হয়ে থাকে ৷

   ভগবান এক, সাধক ও ভক্তেরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ও রুচি অনুসারে তাঁর উপাসনা করে থাকে ৷ যেমন গৃহস্থেরা একটা বড় মাছ বাড়িতে এলে কেউ ঝোল করে, কেউ ভাজে, কেউ তেল-হলুদে চচ্চড়ি করে, কেউ ভাতে দেয়, কেউ কেউ বা অম্বল করে খেয়ে থাকে ৷ সেই রূপ যাদের যেমন রুচি,  তারা সেই রকম ভাবে ভগবানের সাধন-ভজন উপাসনা করে থাকে ৷

















Thursday, 9 June 2016

শ্রীশ্রীঠাকুরের অমৃতবাণী


  যে কেবল বলে 'আমি পাপী ' 'আমি পাপী ' সেই পড়ে যায় ৷ বরং বলতে হয়, আমি তাঁর নাম করেছি, আমার আবার পাপ কি? বন্ধন কি? 

  ঈশ্বরের নামে এমন বিশ্বাস হওয়া চাই  --- 'কি, আমি তাঁর নাম করেছি, আমার এখনও পাপ থাকবে!  আমার আবার পাপ কি? আমার আবার বন্ধন কি? 

  কারুকে নিন্দা কোরো না, পোকাটিরও না ৷ নারায়ণই এই সব রূপ ধরে রয়েছেন ৷ যেমন ভক্তি প্রার্থনা করবে তেমনই এটাও বলবে -- 'যেন কারও নিন্দা না করি ৷'

  মানুষ  -- যেমন বালিশের খোল; বালিশের ওপর দেখতে কোনটা লাল, কোনটা কাল;  কিন্তু সকলের ভেতর সেই একই তুলো ৷ মানুষ দেখতে কেউ সুন্দর, কেউ কাল,  কেউ সাধু, কেউ অসাধু;  কিন্তু সকলের ভেতর সেই এক ঈশ্বরই বিরাজ করছেন ৷

  সকলকে ভালবাসতে হয় ৷ কেউ পর নয় ৷ সর্বভূতেই সেই হরি আছেন ৷ তিনি ছাড়া কিছুই নাই ৷

Wednesday, 8 June 2016

অমৃতবাণী--সারদামা



ঠাকুর ছিলেন -- তিনি একটি দেখা (প্রত্যক্ষদর্শী ) লোক, তিনি সব দেখছেন,  তিনি সব জানেন,  তাঁর কথা বেদ - বাক্য ৷ তাঁর কথা যদি বিশ্বাস না করবে তো কি করবে ৷

তাঁর নিজের মুখের কথা -- তাঁকে স্মরণ করলে কোন দুঃখ থাকে না ৷

যে একবার ঠাকুরকে ডেকেছে তার আর ভয় নেই ৷ ঠাকুরকে ডাকতে ডাকতে, কৃপা হলে, তবে প্রেম - ভক্তি হয় ৷ তাঁর নাম করবে, তাঁতে খুব বিশ্বাস রাখবে ৷ সংসারে মা - বাপ ছেলেদের আশ্রয়স্থল, তেমনি ঠাকুরকে জ্ঞান করবে ৷ 

ঠাকুর আর কোথায়? তিনি ভক্তের নিকটে ৷ মনে ভাববে, আর কেউ না থাক, আমার একজন  'মা' আছেন! ঠাকুর যে বলে গেছেন, এখানকার সকলকে তিনি শেষ দিনে দেখা দেবেনই ৷

ঠাকুরের কাছে মনের কথা জানিয়ে প্রার্থনা করবে ৷প্রাণের কথা কেঁদে বলবে --দেখবে তিনি একেবারে কোলে বসিয়ে দেবেন ৷

ডাকতে থাক, ক্রমে হবে ৷ কত মু নি - ঋষিরা যুগ - যুগান্তর ধরে তপস্যা করে পেলে না, আর তোমাদের ফস্ করে হবে? এ জন্মে না হয় পরজন্মে হবে, পরজন্মে না হয় তার পরজন্মে হবে ৷ ভগবান  লাভ কি এতই সোজা? তবে এবার ঠাকুরের সোজা পথ,  তাই ৷
তোমাদের আর ভয় কি? তাঁর শরণাগত হয়ে থাকবে ৷ আর সর্বদা জানবে যে ঠাকুর তোমাদের পেছনে আছেন ৷..... ঠাকুরের শরণাগত হলে সব হয় ৷
সব সত্যি,  সব সত্যি,  কিছু মিথ্যে নয়,  মা ৷ উনিই (ঠাকুর ) প্রকৃতি, উনিই পুরুষ ৷














Saturday, 4 June 2016

Shodashi Puja


During this period of her stay at the temple –garden of Dakshineswar, Sri Ramakrishna felt a strong desire to worship the Goddess Shodashi, the Divine Mother of the universe. It was the new moon of June 5, 1872, an auspicious night for the worship of the Goddess Kali. Sri Ramakrishna made all the arrangements for it in his own room and instructed the Holy Mother to be present there at 9 pm. As desired by him, she appeared in time and occupied the seat which was reserved for the Goddess Shodashi. Sri Ramakrishna went through all the appropriate rites and formalities of worship in which the Holy Mother took the place of the Deity. In the stillness of night both the worshipper and the worshipped passed into spiritual ecstasy and were joined in a transcendental union in the Self. At the end of this worship he surrendered himself and the fruits of his lifelong Sadhana (spiritual practices) together with his rosary at the feet of the Holy Mother and saluted her. With this sacred ceremony, called in the scriptures the Shodashi-Puja or the worship of the Divine Mother Tripurasundari, was finished the long course of his spiritual practices. Thus the ultimate objective of a marital life was revealed and demonstrated in this twin personality in a manner unprecedented in the annals of mankind. It is a luminous instance of how the conjugal relation between the husband and the wife can be spiritualized and be the means to realization of the highest end of human existence. 

ষোড়শী পূজা কেন?

ষোড়শী পূজা কেন? 

অন্য বহুভাবে ও বহু কথাচ্ছলে শ্রীমায়ের সহিত ঠাকুরের সম্বন্ধ প্রকটিত হইয়া থাকিলেও ঐ অভিব্যক্তির ধারা পরিপূর্ণতা লাভ করিয়াছিল ষোড়শীপূজায় ৷ সে পূজার তাৎপর্য ঠাকুরের দিক হইতে আলোচনা না করিয়া মায়ের দিক হইতেই বুঝিতে চেষ্টা করিব ৷ যখন ঠাকুর আর মায়ের বিবাহ হয় তখন মা নিতান্তই ক্ষুদ্র বালিকা ৷ কামারপুকুরে অবস্থানের সময় ঠাকুর মাকে দিব্যপ্রেমের আস্বাদ দিয়াছিলেন  ও কামারপুকুর এবং দক্ষিণেশ্বরে তাঁহাকে লৌকিক ও দেবজীবনোচিত অপূর্ব সম্পদরাশিতে ভূষিত করিয়াছিলেন ৷ অধুনা নারীর দেবীত্বের উদ্বোধনের সময় সমাগত জানিয়া ও যাঁহাকে ঠাকুর স্বীয় লীলা সম্পূরণের জন্য রাখিয়া যাইবেন,  তাঁহাকে অন্তরের পূজা প্রদানপূর্বক নিজসকাশে ও জনসমাজে সম্মানিত ও মহিমামণ্ডিত এবং সেই দেবীকে স্বীয় শক্তিবিষয়ে অবহিত করিবার প্রয়োজন ছিল বলিয়াই ষোড়শীপূজার আয়োজন ৷ 

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :-
শ্রীমা সারদা দেবী
স্বামী গম্ভীরানন্দ

Friday, 3 June 2016

ষোড়শীপূজা


১২৭৯ সালের ২৪ জ্যৈষ্ঠ (৫ জুন, ১৮৭২) অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিণী -কালিকাপূজার দিন ৷ আজ  শ্রীশ্রী ঠাকুরের মনে শ্রীশ্রীজগদম্বাকে তাঁহার ষোড়শী (শ্রী বিদ্যা বা ত্রিপুরা সুন্দরী ) মূর্তি তে আরাধনা করিবার সাধ হইয়াছে ৷ পূজার আয়োজন মন্দিরে না হইয়া গুপ্তভাবে তাঁহারই কক্ষে হইয়াছে ৷ দীনু পূজারী ঠাকুরের ঘরে আসিয়া আয়োজন করিতে লাগিলেন ৷ যথাস্থানে পূজাদ্রব্য সজ্জিত হইল ৷ আরাধ্যা দেবীর কোন প্রতিমা না থাকিলেও তাঁহার জন্য আলিম্পনশোভিত পীঠ ঠাকুরের চৌকির উত্তরে পূজকের সম্মুখে স্থাপিত হইল ৷ সমস্ত আয়োজন শেষ করিয়া দীনু পূজারী চলিয়া গেলেন  ৷
ঠাকুর শ্রীমাকে পূর্বেই পূজাকালে উপস্থিত থাকিতে বলিয়া পাঠাইয়াছিলেন ৷ তিনি ঘরে আসিয়া নিবিষ্টমনে ঠাকুরের পূজা দেখিতে লাগিলেন ৷ ঠাকুর পূর্বমুখ হইয়া পশ্চিম দিকের দরজার কাছে বসিয়াছিলেন ৷ মন্ত্রোচ্চারণ সহকারে যথাবিধি পূর্বকৃত শেষ করিয়া তিনি শ্রীমাকে নির্দিষ্ট পীঠে বসিবার জন্য ইঙ্গিত করিলেন ৷ অর্ধবাহ্যদশায় আবিষ্ট শ্রীমা কেন,  কি করিতেছেন কিছুই না ভাবিয়া পশ্চিমাস্য হইয়া ঠাকুরের সম্মুখস্থ পীঠে উপবেশন করিলেন ৷ তখন মন্ত্রপূত কলসের জল লইয়া ঠাকুর বারংবার শ্রীমায়ের অভিষেক করিলেন ৷ তারপর মন্ত্র শ্রবন করিয়া প্রার্থনামন্ত্র উচ্চারণ করিলেন 

''হে বালে, হে সর্বশক্তির অধীশ্বরী মাতঃ ত্রিপুরাসু্ন্দরী, সিদ্ধিদ্বার উন্মুক্ত কর; ইঁহার (শ্রীমায়ের ) শরীর মনকে পবিত্র করিয়া ইঁহাতে আবির্ভূতা হইয়া সর্বকল্যাণ সাধন  কর ৷''

পরে শ্রীমায়ের অঙ্গে মন্ত্রসকলের যথাবিধি বিন্যাস  করিয়া সাক্ষাৎ দেবীজ্ঞানে ষোড়শোপচারে পূজা করিয়া ভোগ নিবেদন করিলেন ৷ বাহ্যজ্ঞানশূণ্যা শ্রীমা দেখিতে দেখিতে সমাধিরাজ্যে চলিয়া গেলেন,  ঠাকুরও অর্ধবাহ্যদশায় মন্ত্রোচ্চারণ করিতে করিতে সমাধিষ্ট হইলেন ৷
সে ভূমিতে আত্মসংস্থ পূজক ও পূজিতা আত্মস্বরূপে পূর্ণভাবে একীভূত হইলেন ৷ কিছুকাল এইপ্রকারে অতীত হইবার পর মধ্যরাতের অনেক পরে ঠাকুর অর্ধবাহ্যদশায় উপনীত হইয়া দেবীকে আত্মনিবেদন করিলেন ৷ অনন্তর আপনার সহিত নিজ সাধনার ফল এবং জপের মালা প্রভৃতি সর্বস্ব দেবীর শ্রীচরণে চিরতরে বিসর্জন দিয়া মন্ত্রোচ্চারণ করিতে করিতে তাঁহাকে প্রণাম করিলেন ---
'' মূর্তিমতী বিদ্যারূপিণী মানবীর দেহাবলম্বনে ঈশ্বরীর উপাসনাপূর্বক ঠাকুরের সাধনার পরিসমাপ্তি হইল ৷'' শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরানীরও দেবীমানবীত্বের পূর্ণ বিকাশের দ্বার অর্গলমুক্ত হইল ৷ পূজাশেষে বাহ্যভূমিতে আসিবার পর মনে মনে শ্রীশ্রীঠাকুর কে প্রণাম করিয়া শ্রী শ্রী মা নহবতে ফিরিলেন ৷
Courtesy : শ্রীমা সারদা দেবী--স্বামী গম্ভীরানন্দ

আত্মাকে জান; ওঠ, জাগ; ভীত হইও না.... স্বামী বিবেকানন্দ

আমার ভয় নাই,  মৃত্যু নাই; আমার ক্ষুদা নাই,  তৃষ্ণা নাই; আমি ব্রহ্ম, আমি ব্রহ্ম ৷ বিশ্বপ্রকৃতির সাধ্য নাই যে, আমাকে ধ্বংস করে ৷ প্রকৃতি আমার দাস ৷
সুতরাং যখনই অন্ধকার আসিবে, তখনই নিজের স্বরূপ প্রকাশ করিও,  দেখিবে -- সকল বিরুদ্ধ শক্তি বিলীন হইয়া যাইবে ৷ বিরুদ্ধ শক্তিগুলি তো স্বপ্ন মাত্র ৷ জীবনপথের বাধাবিঘ্নগুলি পর্বত প্রমান, দুর্লঙ্ঘ ও বিষাদময় বলিয়া মনে হইলেও এগুলি মায়া ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ ভয় করিও না,দেখিবে উহারা দূরে চলিয়া গিয়াছে ৷ বাধা চূর্ণ করিয়া ফেল, দেখিবে অদৃশ্য হইয়া গিয়াছে; পদদলিত কর, দেখিবে মরিয়া গিয়াছে ৷ ভীত হইও না ৷ বারবার বিফল হইয়াছ বলিয়া নিরাশ হইও না ৷ কাল নিরবধি, অগ্রসর হইতে থাক,বারবার তোমার শক্তি প্রকাশ করিতে থাক, আলোক  আসিবেই ৷ জগতে প্রত্যেকের কাছে সাহায্যপ্রার্থী হইতে পারি, কিন্তু তাহাতে কি ফল হইবে? কে তোমাকে সাহায্য করিবে? মৃত্যুর হাত কে এড়াইতে পারিয়াছে? কে তোমাকে মৃত্যু হইতে উদ্ধার করিবে? তোমার উদ্ধার - সাধন তোমাকেই করিতে হইবে ৷ তোমাকে সাহায্য করার সাধ্য অপর কাহারও নাই ৷ তুমি নিজেই তোমার পরম শত্রু,  আবার তুমিই তোমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু ৷ আত্মাকে জান; ওঠ, জাগ; ভীত হইও না ৷
বাণী ও রচনা, পৃঃ ২৯৩, ২য় খণ্ড (সুবিদিত রহস্য )