Sunday, 8 April 2018

প্রশ্নোত্তরে স্বামীজী



প্র॥ গুরু কাকে বলতে পারা যায়?
উ॥ যিনি তোমার ভূত ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন, তিনিই তোমার গুরু। দেখ না, আমার গুরু আমার ভূত-ভবিষ্যৎ বলে দিয়েছিলেন।প্র॥ ভক্তিলাভ কিরূপে হবে?
উ॥ ভক্তি তোমার ভিতরেই রয়েছে, কেবল তার উপর কাম-কাঞ্চনের একটা আবরণ পড়ে আছে। ঐ আবরণটা সরিয়ে দিলে সেই ভিতরকার ভক্তি আপনিই প্রকাশিত হয়ে পড়বে।প্র॥ আপনি বলে থাকেন, নিজের পায়ের উপর দাঁড়াও; এখানে নিজের বলতে কি বুঝব?
উ॥ অবশ্য পরমাত্মার উপরই নির্ভর করতে বলা আমার উদ্দেশ্য। তবে এই ‘কাঁচা আমি’র উপর নির্ভর করবার অভ্যাস করলেও ক্রমে তা আমাদের ঠিক জায়গায় নিয়ে যায়, কারণ জীবাত্মা সেই পরমাত্মারই মায়িক প্রকাশ বৈ আর কিছুই নয়।প্র॥ যদি এক বস্তুই যথার্থ সত্য হয়, তবে এই দ্বৈতবোধ—যা সদাসর্বদা সকলের হচ্ছে, তা কোথা থেকে এল?
উ॥ বিষয় যখন প্রথম অনুভূত হয়, ঠিক সে-সময় কখনও দ্বৈতবোধ হয় না। ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়-সংযোগ হবার পর যখন আমরা সেই জ্ঞানকে বুদ্ধিতে আরূঢ় করাই, তখনই দ্বৈতবোধ এসে থাকে। বিষয়ানুভূতির সময় যদি দ্বৈতবোধ থাকত, তবে জ্ঞেয় জ্ঞাতা থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্ররূপে এবং জ্ঞাতাও জ্ঞেয় থেকে স্বতন্ত্ররূপে অবস্থান করতে পারত।প্র॥ সামঞ্জস্যপূর্ণ চরিত্রগঠনের প্রকৃষ্ট উপায় কি?
উ॥ যাঁদের চরিত্র সেইভাবে গঠিত হয়েছে, তাঁদের সঙ্গ করাই এর সর্বোৎকৃষ্ট উপায়প্র॥ বেদ সম্বন্ধে আমাদের কিরূপ ধারণা রাখা কর্তব্য?
উ॥ বেদই একমাত্র প্রমাণ—অবশ্য বেদের যে অংশগুলি যুক্তিবিরোধী, সেগুলি বেদ-শব্দবাচ্য নহে। অন্যান্য শাস্ত্র যথা পুরাণাদি—ততটুকু গ্রাহ্য, যতটুকু বেদের অবিরোধী। বেদের পরে জগতের যে-কোন স্থানে যে-কোন ধর্মভাবের আবির্ভাব হয়েছে, তা বেদ থেকে নেওয়া বুঝতে হবে।প্র॥ এই যে সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি—চারি যুগের বিষয় শাস্ত্রে পড়া যায়, ইহা কি কোনরূপ জ্যোতিষশাস্ত্রের গণনাসম্মত অথবা কাল্পনিক মাত্র? উ॥ বেদে তো এইরূপ চতুর্যুগের কোন উল্লেখ নেই, এটা পৌরাণিক যুগের ইচ্ছামত কল্পনামাত্র।প্র॥ শব্দ ও ভাবের মধ্যে বাস্তবিক কি কোন নিত্য সম্বন্ধ আছে, না যে-কোন শব্দের দ্বারা যে-কোন ভাব বোঝাতে পারা যায়? মানুষ কি ইচ্ছামত যে-কোন শব্দে যে-কোন ভাব জুড়ে দিয়েছে?
উ॥ বিষয়টিতে অনেক তর্ক উঠতে পারে, স্থির সিদ্ধান্ত করা বড় কঠিন। বোধ হয় যেন, শব্দ ও ভাবের মধ্যে কোনরূপ সম্বন্ধ আছে, কিন্তু সেই সম্বন্ধ যে নিত্য, তাই বা কেমন করে বলা যায়? দেখ না, একটা ভাব বোঝাতে বিভিন্ন ভাষায় কত রকম বিভিন্ন শব্দ রয়েছে। কোনরূপ সূক্ষ্ম সম্বন্ধ থাকতে পারে, যা আমরা এখনও ধরতে পারছি না।প্র॥ ভারতের কার্যপ্রণালী কি ধরনের হওয়া উচিত?
উ॥ প্রথমতঃ সকলে যাতে কাজের লোক হয় এবং তাদের শরীরটা যাতে সবল হয়, তেমন শিক্ষা দিতে হবে। এই রকম বার জন পুরুষসিংহ জগৎ জয় করবে, কিন্তু লক্ষ লক্ষ ভেড়ার পালের দ্বারা তা হবে না। দ্বিতীয়তঃ যত বড়ই হোক না কেন, কোন ব্যক্তির আদর্শ অনুকরণ করতে শিক্ষা দেওয়া উচিত নয়। 


No comments:

Post a Comment